ইতিহাসের পক্ষে : সাইফুর আর মিশু

Date:

Share post:

সাইফুর মিশু:
১৯৭১ এর ২৭শে এপ্রিলের পর ম্ত্রী পরিষদের টি জরুরী সভা আবান করেন ভারতীয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা ান্ধী। উক্ত সভায় নিয়ম বহির্ভুতভাবে ইন্দিরার অনুরোধে যোগ দেন তৎকালীন াপ্রধান স্যাম মানেকশ।

সভায় ইন্দিরা গান্ধী সেনা প্রধানকে বলেন, “পূর্ব পাকিস্তানে বাঙ্গালীদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তানীরা। তুমি কি করবে করো। পূর্ব পাকিস্তানে ঢুকে যাও তোমার বাহিনী নিয়ে।”

স্যাম মানেকশ উক্ত সভায় জানান তিনি তার জন্য তাৎক্ষনিকভাবে প্রস্তত নন। এবং শীঘ্রই পূর্ব পাকিস্তানে মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হবে। বৃষ্টির মৌসুমে নদী সহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে যাবে। ভারতীয় সেনাবাহিনী ভারী বর্ষণের সময় বিমানবাহিনীর সহযোগিতা পাবে না। অপরদিকে ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে তখন ছিল ফসল কাটার মৌসুম। ভারত পূর্ব পাকিস্তানে সেনা অভিযান শুরু করলে পাকিস্তান পশ্চিমা সীমান্তে বিমান আক্রমণ করলে ফসলের ক্ষতি হবে তাদের।

স্যাম মানেকশ উক্ত সভায় সময় চেয়ে নেন তার বাহিনীকে প্রস্তুত করার জন্য। পরবর্তীতে প্রায় তার কাছে জানতে চাওয়া হতো কি পরিমাণ সময় লাগবে তার প্রস্তুতির জন্য। স্যাম জবাবে বলতো, “আমার ছেলেরা পূর্ব পাকিস্তানের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে হেঁটে যেতেও এক থেকে দেড় মাস সময় লাগবে। আমাকে তো যেতে হবে করতে করতে।”

৩রা ডিসেম্বর যখন পাকিস্তান ভারতের উপর সরাসরি আক্রমণ চালিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তখন ভারত পাল্টা জবাব দিতে শুরু করে এবং আমাদের বাহিনীর পাশাপাশি মিত্র বাহিনী সরাসরি ঢুকে পড়ে ইস্টার্ণ ফ্রন্টে। ১৩দিনের যুদ্ধের মাথায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণে রাজি হলে ইন্দিরা গান্ধী স্যাম মানেকশকে প্রশ্ন করেন, “তুমি বলেছিলে তোমার এক থেকে দেড় মাস সময় লাগবে। তা ১৩ দিনে কিভাবে সম্ভব হলো?” স্যাম মানেকশ জবাব দিয়েছিলেন, “১৩ দিনে বেশী ১৪ দিন লাগলেও তো আমাকে আপনিই বার বার প্রশ্ন করতেন।”

এ কথা সত্যি যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সকল রকম সহযোগিতা আমাদের তরান্বিত করেছিল। তবে এর আগেই আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল দখল করে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল সবুজের পতাকা উড়িয়ে এগোচ্ছিলেন ঢাকার দিকে।

৩রা ডিসেম্বরের উল্লেখ যোগ্য ঘটনাবলীর মধ্যে ভারত পাকিস্তান সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হওয়া ব্যতীত আছে রংপুরে ১২জন পাকিস্তানী সেনা সদস্যের আত্মসমর্পণ, পাকিস্তান এয়ার লাইন্সের পূর্ব এবং পশ্চিমের মধ্যে সকল ফ্লাইট বাতিল, সেদিন বিকেলে কলকাতার এক জনসভায় শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ভাষণ দানকালে ভারতীয় বিমানঘাঁটি এবং রাডার স্টেশনগুলোতে পাকিস্তানী বিমান হামলা, পাকিস্তানী বিমানবাহিনীর ভারতের অমৃতসর, পাঠানকোট এবং শ্রীনগরে হামলা, গোলাম আযমের করাচী পলায়ন।

এছাড়া শুক্রবার ছিল বলে জুমার নামাযের পর ভারতীয় হামলার প্রতিবাদে একটি মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে জমায়েত হয় লাল দীঘির ময়দানে। উক্ত জমায়েতে বক্তব্য রাখে কনভেনশন লীগ প্রধান ফজলুল কাদের চৌধুরী, পিডিপির মাহমুদুন্নবী চৌধুরী, ছাত্র আবু তাহের প্রমুখ।

তথ্যসূত্রঃ
১) স্যাম মানেকশর সাক্ষাৎকার।
২) স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র।
৩) বিভিন্ন নিউজ আর্কাইভ।
৪) মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১, ডিসেম্বরের দিনগুলি – নুরুজ্জামান মানিক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

একটা চেয়ারের জন্য এতকিছু

সাবেক সংসদ সদস্য,রাজনীতিবিদ ও কলাম লেখক গোলাম মাওলা রনি বলেছেন,এই ভদ্রলোক (মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম)...

আলাস্কার উপকূলে ৩ হাজার গাড়িবাহী জাহাজে আগুন

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কার উপকূলে প্রায় ৩ হাজার গাড়ি বহনকারী একটি কার্গো জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৮০০টি ইলেকট্রিক গাড়িসহ...

সন্ধ্যায় জেল থেকে বেরিয়ে রাতে ডাকাতির চেষ্টা, পিস্তলসহ গ্রেপ্তার ৩

সন্ধ্যায় জেল থেকে বেরিয়ে রাতে পশুর হাটে ডাকাতির উদ্দেশ্যে বের হওয়া তিন যুবককে গ্রেপ্তার করেছে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ...

কামাল মজুমদার এবার অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার

রাজধানীর বনানী থানার অস্ত্র আইনের এক মামলায় সাবেক শিল্পপ্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানি...