মেক্সিকোর আধুনিক চিত্রকলার সবচেয়ে মেধাবী এবং গুরুত্বপূর্ণ বলা হয় ফ্রিদা কাহলোকে। সম্প্রতি লন্ডনে প্রথমবারের মত ফ্রিদা কাহলোর ব্যবহার্য জিনিসপত্রের একটি প্রদর্শনী শুরু হয়েছে।
লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামে ফ্রিদা কাহলোর ওপর যে প্রদর্শনী হচ্ছে তাতে ফ্রিদা কাহলোকে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য পোশাক এবং তার ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিসপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।
মেক্সিকোর বাইরে এই প্রথম তার ব্যবহার্য জিনিসের প্রদর্শনী হচ্ছে।
মেক্সিকোর নিজস্ব ঐতিহ্যের প্রতীক এবং নারীবাদীদের কাছে নারীর অভিজ্ঞতা ও সৌন্দর্যের সাহসী প্রকাশের জন্য ফ্রিদা কাহলো আলোচিত ও সমাদৃত। তিনি যথেষ্ট বিতর্কিতও ছিলেন।বার্বি পুতুল, টেরিজা মে’র হাতের ব্রেসলেট কিংবা তাস—ফ্রিদা কাহলো সবখানেই জনপ্রিয়
প্রদর্শনীর কো-কিউরেটর সির্সে হেনেসত্রোসা, যিনি বলছেন ফ্রিদার যে বিভিন্ন পরিচয় আছে, তার সবগুলোই হাজির করতে চান তারা।
“ফ্রিদা কাহলো ছিলেন বিপ্লবী, তীব্র বোধসম্পন্ন, খামখেয়ালি, প্যাশনেট, কখনো খুবই বিপরীতমুখী অবস্থানের, ভীষণ শক্ত মনের। আবার একই সাথে তিনি ছিলেন খুবই যত্নশীল, স্নেহময় আর একেবারেই অনন্য।”
ফ্রিদা কাহলোর জন্ম ১৯০৭ সালে। দুটি ঘটনা তার জীবনে গভীরভাবে ছাপ ফেলেছিল।
ছয় বছর বয়সে পোলিওতে তার একটি পা খাটো হয়ে গিয়েছিল। এরপর ১৮ বছর বয়সে এক ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটে তার জীবনে, যাতে তাকে প্রায় ৩০টি অপারেশন করাতে হয়েছিল।দর্শক-দর্শনী দুটোই এখন ইউটিউব বিনোদনেএই সময়টি ছিল বস্তুত একজন অসাধারণ শিল্পীর ক্যারিয়ার শুরুর সময়, কিন্তু এই সময়টাতেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল ক্রমেই।
এক পর্যায়ে ১৯৫৩ সালে তার পা দুটি কেটে ফেলতে হয়েছিল।
হেনেসত্রোসা কয়েক বছর আগে ফ্রিদা কাহলোর ওপর একটি গবেষণা শুরু করেন, যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ফ্রিদা কাহলোকে মেক্সিকোর বাইরে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়া।
সেই সঙ্গে তার ব্যতিক্রমী জীবনের প্রেক্ষাপট কিছুটা বিশ্লেষণ করে দেখা। এই প্রদর্শনী সেজন্যই আয়োজন করা হচ্ছে।
“ফ্রিদা কাহলো এখন মেক্সিকোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিত্রশিল্পী। ফ্যাশন ডিজাইনার, নারীবাদী আন্দোলনকারী, শিল্পী, সংস্কৃতিবান সকলেই তাকে নিজেদের মানুষ ভাবে।
মানুষ তার কাজের সঙ্গে দ্রুতই নিজেদের মেলাতে পারে। সেকারণেই তার জিনিসপত্রের প্রদর্শনী খুবই সঙ্গত আজকের দিনে।”
মেক্সিকোতে ফ্রিদা কাহলোর বাড়িটির নাম ছিল ‘লা কাসা আসুল’ বা নীল বাড়ি।
প্রদর্শনীতে সেই বাড়িটির বিভিন্ন ঘরের আদল তৈরি করা হয়েছে। ১৯৫৪ সালে তার মৃত্যুর পর তার জিনিসপত্র এখানেই আটকানো অবস্থায় ছিল।
কারণ বাড়িটির মালিক সেটি বন্ধ করে রেখেছিলেন। প্রায় ৫০ বছর বন্ধ থাকার পর, ২০০২ সালে বাড়ি মালিক মারা যাবার পর সেই বাড়ি খোলা হয়।
“আমরা ছয় হাজার ফটো, বারো হাজার বিভিন্ন ধরণের দলিলপত্র, আর প্রায় তিন শো ধরণের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিসপত্র পেয়েছি।
তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র দিয়ে তাকে নতুন করে প্রথমবারের মত চিনতে পারবে কেউ।
আমি এমন একজন নারীকে চিনলাম যিনি ভীষণ রকম বিশুদ্ধ, যিনি সাজতে ভালবাসতেন।
এমন এক সময়ে যখন সাজপোশাকের বিষয়ে সবাই হলিউডকে অনুকরণ করত, তখন তিনি দেশীয় পোশাক পড়াকে নিজের লোগো বানিয়ে ফেলেছিলেন।”
হেনেসত্রোসা বলছেন, ফ্রিদা তেহুয়ানা নামে এক বিশেষ ধরণের পোশাক পরতেন, মেক্সিকোর একটি মাতৃতান্ত্রিক আদিবাসী গোষ্ঠীর নারীরা সে রকম পোশাক পরতেন।
এর মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক বিশ্বাস এবং নারীর নিজস্ব শক্তির একটি প্রতীক ফুটিয়ে তুলতেন।
হেনেসত্রোসা বলছেন, এই প্রদর্শনী নতুন প্রজন্ম বিশেষ করে নারীদের অনুপ্রাণিত করবে, তারা নতুন করে একজন চিন্তাশীল নারী এবং শিল্পীকে জানতে পারবে।