বাংলাদেশে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের প্রধান মিঠুন চৌধুরীসহ দুজন নিখোঁজ হয়েছিলেন ২৭শে অক্টোবর। পুলিশ বলছে ১৩ই নভেম্বর সোমবার রাতে তাদের ঢাকায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
পরিবারের দাবি প্রথম দিনই তাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়েছে। ১৮ দিন নিখোঁজ ছিলেন মিঠুন চৌধুরী ও অন্য রাজনীতিক। তাহলে তারা ১৭দিন কোথায় ছিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাদের পরিবার।
মিঠুন চৌধুরীর স্ত্রী বলছেন সাম্প্রতিক কিছু ইস্যুতে মতামত প্রকাশের কারণেই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁর স্বামীসহ দু’জনকে তুলে নেয়ার এতদিন পর এখন গ্রেফতারের কথা বলছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু নিখোঁজের ঘটনায়, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়েই জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার একমাস পরই নিখোঁজ হন মিঠুন চৌধুরীসহ দলটির দু’জন নেতা।
গত ২০শে সেপ্টেম্বর ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জনতা পার্টি বা বিজেপি নামে ওই দলের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দিয়েছিলেন মিঠুন চৌধুরী। তিনি বলেছিলেন এই দল গঠনের উদ্দেশ্য হিন্দু বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা।বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে মিঠুন চৌধুরীর মতো নিখোঁজ হয়েছেন বেশ কিছু ব্যক্তি যাদের মধ্যে রয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মোবাশ্বর হাসান ।
পরে ২৭শে অক্টোবর রাতে মিস্টার চৌধুরী ও তার দলের আরও একজন নেতা আশিক ঘোষ ঢাকার সূত্রাপুরের একটি মার্কেটের সামনে থেকে নিখোঁজ হন। পরিবারের অভিযোগ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে সাদা পোশাকে থাকা ব্যক্তিরা তাদের তুলে নিয়েছে। যদিও পুলিশ বরাবরই এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
সহকারী পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমান বলছেন ওই দুজন পলাতক ছিলেন এবং তারা সোমবার রাতে ঢাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করেছেন।
তিনি বলেন, “মিঠুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাতটি মামলা ও ওয়ারেন্ট ছিলো। তিনি পলাতক ছিলেন বলে পরিবার জানতে পারেনি। মামলা ও রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে ৫৪ ধারায় সোমবার আটক ক’রে পরে আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা তাদের রিমান্ডে নিয়েছি।”
কিন্তু নিখোঁজের ঘটনার পর মিঠুন চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর কাছে দফায় দফায় ধর্না দিয়েও ইতিবাচক সাড়া পাননি।
তবে এখন যখন পুলিশ তাদের গ্রেফতারের কথা বলছে, তাতে ঐ পরিবারগুলো এটুকু স্বস্তি পেয়েছেন যে, তাদের নিখোঁজ স্বজনরা বেঁচে আছেন। যদিও পুলিশ এখন যেসব বক্তব্য করছে, তার সাথে একমত নন মিঠুন চৌধুরীর স্ত্রী সুমনা চৌধুরী।
তিনি বলেন, “আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই তাদের নিয়েছে। আমরা থানায় গেলে তারা ডিবির কথা বলেছে। পরে ডিবি অস্বীকার করেছে। আমাকে মানববন্ধন করতে দেয়া হয়নি। আর আমার স্বামী পলাতক থাকবে কেন? নিখোঁজ হওয়ার আগে তিনি ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন, ফোন খোলা ছিলো।”
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে মিঠুন চৌধুরীর মতো নিখোঁজ হয়েছেন বেশ কিছু ব্যক্তি যাদের মধ্যে রয়েছে ঢাকার সাংবাদিক উৎপল দাশ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মোবাশ্বর হাসান ও ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়। এসব নিখোঁজের অনেক ঘটনায় থানায় অভিযোগ নিতে গড়িমসি করার অভিযোগও উঠেছে।বাংলাদেশের খ্যাতিমান লেখক ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহারকে পুলিশ উদ্ধার করলেও কারা তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, সেই রহস্য উদঘাটন করা যায়নি।
আবার নিখোঁজ হওয়ার পর শিক্ষক মোবাশ্বার হাসানের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মাঝে মধ্যে সক্রিয় হওয়া কিংবা সাংবাদিক উৎপল দাশের পরিবারের কাছে ফোন করে টাকা দাবির মতো ঘটনাও ঘটেছে।
গত কয়েক বছরে নিখোঁজ হওয়ার পর যারা পরে পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন তারাও পরে এসব বিষয়ে আর মুখ খোলেননি। অনেক ক্ষেত্রে নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরে বিভিন্ন অভিযোগে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
এসব কারণে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি সন্দেহ দিনে দিনে বাড়ছে বলে মনে করেন মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন।
সরকার বা পুলিশের তরফ থেকে অবশ্য সবসময়ই নিখোঁজ বা গুমের ঘটনায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়।
এদিকে, গ্রেফতারের কথা পুলিশের প্রকাশ করার পর এখন মিঠুন চৌধুরীর সন্ধান পেয়ে তার পরিবার পুরো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাইছে।