‘রোহিঙ্গা’ ও ‘শরণার্থী’ বলবে না বাংলাদেশ সরকার

Date:

Share post:

মিয়ানমার থেকে লাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কী নামে অভিহিত করা হবে সেটি য়ে সরকারের মাঝে এক ধরনের দোদুল্যমানতা ছিল।

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ‘শরণার্থী’ হিসেবে বিবেচনা করতে চায় না সরকার।

সেজন্য বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক’ হিসেবে অভিহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সরকারের বিভিন্ন সূত্র বলছে, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষের সাথে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের যত দ্রুত সম্ভব সেদেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

কিন্তু শরণার্থীর মর্যাদা দিলে সেটি দীর্ঘসূত্রিতায় আে যাবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা এইচ টি ই বলছেন, ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক’ বলার ক্ষেত্রে কিছু যুক্তি আছে।

মি ইমাম বলেন, ” আমরা সরকারের তরফ থেকে বলছি এরা মিয়ানমারেরই নাগরিক। মিয়ানমারের সরকার এবং মিলিটারি এ সমস্যা সৃষ্টির জন্য দায়ী। অতএব এর সমাধান তাদেরকেই করতে হবে। অর্থাৎ তাদেরকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ঐ দিক থেকে আমাদের যুক্তিটা জোরালো হয়।”

তিনি বলেন,’বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক’ নামটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যব করতে চায়। তবে প্রধানমন্ত্রী বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর এনিয়ে আরো আলোচনা হবে।কুতুপালং-এর একটি শরণার্থী শিবির

বাংলাদেশ সরকার মনে করে, রোহিঙ্গাদের শরণার্থীর মর্যাদা দিলে সেটি তাদের নিজ দেশে ফিরে যাবার ক্ষেত্রে একটি দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হবে। তাছাড়া শরণার্থী হিসেবে থাকলে তাদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকার বাধ্য থাকবে।

শরণার্থী বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি বাংলাদেশ।

কিন্তু তারপরেও এ দফায় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসার পর তাদের থাকার জন্য সরকার বনভূমির প্রায় তিন হাজার একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য দেশি বিদেশী ত্রাণ গ্রহণ করছে সরকার। ত্রাণ কাজে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানো হচ্ছে।

তাদের শরণার্থীর মর্যাদা না দিয়ে ভিন্ন কোন নামে অভিহিত করলে বাংলাদেশের কতটা লাভ হবে সেটি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করেন সাবেক পররাষ্ট্র তৌহিদ হোসেন।

মি: হোসেন বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা অনুযায়ী শরণার্থী। কারণ রোহিঙ্গারা অত্যািত হয়ে প্রাণভয়ে সীমান্ত পেরিয়ে অন্য দেশে এসেছে।শান্তিতে নো পুরস্কার পেল আইক্যান

“তাদেরকে কেন অন্য নামে ডাকা হচ্ছে আমি তো বুঝতে পারছি না। আমি তো মনে করি তাদেরকে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত করা উচিত। কারণ শরণার্থীদেরই অধিকার আছে নিজ দেশে ফিরে যাবার, সেটা যতো সময় লাক না কেন,” বলছিলেন সাবেক এ পররাষ্ট্র সচিব।

গত বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করছে না। কারণ তারা মনে করেন মিয়ানমার যেহেতু রোহিঙ্গা শব্দটি স্বীকার করে না সেজন্য বাংলাদেশও এ শব্দটি ব্যবহার না করলে আলোচনার দরজা খোলা থাকবে।

শরণার্থী বিষয়ক গবেষণা সংস্থা রামরুর সি আর আবরার মনে করেন, রোহিঙ্গাদের ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক’ বললে পরিস্থিতির কোন তফাৎ হবে না।আশ্রয় শিবিরের জীবন

মি: আবরার মনে করেন, শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেবার কিছু সুবিধা আছে। কারণ শরণার্থীরা নিজ দেশে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত তাদের দেখাশুনার দায়িত্ব শুধু আশ্রয় দানকারী দেশের উপর নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপরও বর্তায়।

রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি না দিলে সেটি অনেকটা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দায় দেবার মতো হবে বলে মনে করেন মি: আবরার।

তিনি বলেন, ” ১৯৯২ সালের মার্চ মাসের পর থেকে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন, তাদেরকে সরকার শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় নি। তাদেরকে কি সরকার ফেরত পাঠাতে পেরেছেন? পারেন নি।”

তিনি মনে করেন, রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক’ হিসেবে বর্ণনা করলেও বাস্তব পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

নাটকীয়তার পরে অবশেষে গ্রেপ্তার আইভী

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৮ মে) দিবাগত রাত ৩টার...

নিষিদ্ধ হচ্ছে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ

রাজনীতি আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নিষিদ্ধ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়...

চট্টগ্রাম সত্যিকারের কমার্শিয়াল সিটি হবে

বাংলাদেশের ফুল এমবিশনের মধ্যমণি চট্টগ্রাম। আমরা বাংলাদেশকে যেখানে নিয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করছি; সেটির সেন্টার পিস হচ্ছে চট্টগ্রাম।...

চারদিন আগে নিহত আইনজীবীর লাশ উদ্ধার

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পৌরসভার বালুবাগান এলাকা থেকে ৪ দিন আগে মারা যাওয়া মঈন উল বারি (৪৭) নামে এক আইনজীবীর লাশ...