মালয়েশিয়ার একটি শহরে একটি কাপড় ধোয়ার দোকান বা ধোবিখানা ‘শুধু মুসলিম ক্রেতাদের জন্য’ সেবা দিচ্ছে -এমন এক খবরে সেদেশে তৈরী হয়েছে বিতর্ক।
মালয়েশিয়ায় দু-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী মুসলিম। এ সপ্তাহের শুরুর দিকে জোহর শহরে এমন এক ‘মুসলিম-বান্ধব’ লন্ড্রীর বিজ্ঞাপনের ছবি বেরুনোর পর তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।
এতে বলা হয়, “এই লন্ড্রী বিশুদ্ধতার স্বার্থে শুধু মুসলিম গ্রাহক নিয়ে থাকে। এতে কারো অসুবিধা হয়ে থাকলে আমরা দু:খিত।”
এসব ধোবিখানায় অনেকগুলো ওয়াশিং মেশিন থাকে – যেখানে লোকেরা পয়সার বিনিময়ে নিজেদের কাপড় নিজেরা ধোলাই করিয়ে নিতে পারেন।
দোকানের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দি স্টার সংবাদপত্রকে বলেন, “মুসলিমদের জন্য এটা শুধু পরিষ্কার কাপড়চোপড়ের ব্যাপার নয়, আমি বলছি সার্বিক অর্থে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা। আর এখানে আমি মুসলিমদের জন্য সেই সুযোগই করে দিয়েছি।”
তিনি বলেন, তার গ্রাহকরাই এরকম একটি সেবা চালু করার জন্য তাকে অনুরোধ করেছিলেন। মালয়েশিয়ান ইনসাইট নামে একটি ওয়েবসাইট বলছে, এক মাস আগেই এই নতুন সেবার সাইনবোর্ড দেয়া হয়।মালয়েশিয়ায় বিতর্ক শুরু করেছে এই ‘শুধু-মুসলিমদের’ ধোবিখানা
কিন্তু এতে মালয়েশিয়ার মুসলিম এবং অ-মুসলিম নির্বিশেষে অনেকেই এতে বিস্ময় প্রকাশ করেছে।
এমনকি রাজ্যের সুলতান ইব্রাহিম ইবনি সুলতান ইসকান্দারও বলেছেন, তিনি এত ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত। তিনি সেই লন্ড্রীকে অবিলম্বে এই ‘বৈষম্য’ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, না হলে এটা বন্ধ করেও দেয়া হতে পারে।
মালয়েশিয়ায় সুলতানের পদটি অবশ্য মূলত আলংকারিক এবং তাদের আইনী ক্ষমতা নেই। তবে তিনি ইসলামের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন এবং তাদের রাজনৈতিক প্রভাবও আছে
তিনি বলেছেন, “এটা কোন তালিবান রাষ্ট্র নয় এবং জোহরে ইসলামের প্রধান হিসেবে আমি একে সম্পূর্ণ অগ্রহণোগ্য বলে মনে করি। এটা প্রকৃতিগতভাবেই চরমপন্থী।”
স্টার পত্রিকাকে তিনি আরো বলেন, “জোহর সব জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মের শহর, এটি একটি প্রগতিশীল, আধুনিক ও মধ্যপন্থী রাজ্য।”
মালয়েশিয়ায় এই শুধু-মুসলিমদের লন্ড্রী মানুষের মনের গভীরে নাড়া দিয়েছে।
টুইটারে একজন মন্তব্য করেছেন, “পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নাম করে অমুসলিমদের ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করতে না দেয়ায় ইসলামের নাম কালিমালিপ্ত হয়েছে।
তবে আরেকজন টুইট করেছেন, “অনেক চীনা এই মুসলিম লন্ড্রী দেখে রাগ করেছেন তারা কি কখনো ‘শুধু চীনাদের জন্য’ বাড়ি ভাড়ার বিজ্ঞাপন দেখেন নি?
সুলতানের সমালোচনার পর অবশ্য লন্ড্রীর মালিক দু:খ প্রকাশ করে সাইনবোর্ডটি সরিয়ে ফেলেছেন। তবে খবর বেরিয়েছে, অন্য আরেক রাজ্যে আরেকটি লন্ড্রী ঠিক একই কাজ করছে।