ভাঙছে কর্ণফুলী, কপাল পুড়ছে নদীর তীরবর্তী বাসিন্দাদের। অব্যাহত ভাঙনে বাকলিয়ার সাত শতাধিক পরিবার ঝুঁকিতে পড়েছে। এলাকাবাসী জানায়, অন্তত ৩০ বছর ধরে ভাঙন চলে আসছে। কয়েক বছর ধরে নদীর পানি বাড়ায় ভাঙনও তীব্র হয়েছে। চলতি বছর নগরীর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের কর্ণফুলীর তীরবর্তী এলাকা
সরেজমিন দেখা যায়, নগরীর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের কর্ণফুলীর তীরবর্তী এলাকা বলিরহাট, ঘাটকুল, জেলেপাড়া, শাহজীপাড়া, জান আলী বলির পাড়া, হাজি খুইল্ল্যা মিয়া পাড়া, কমিশনার পাড়া,বজ্রঘোনা, চেয়ারম্যান ঘাটা এলাকায় নদী ভাঙন রয়েছে। কয়েক শ ঘরবাড়ি, দোকানপাট নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে অনেক পরিবার। ঘরবাড়ি ছাড়াও ফসলি জমি, ক্ষেত-খামার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। জান আলী বলির বাড়ির এক বাসিন্দা জানান, অন্তত ৩০ বছর ধরে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
তবে ১৫ বছর আগে কিছু এলাকায় পাথর ফেলা হয়েছে। সেসবর এলাকায় ভাঙন কম রয়েছে। অন্যান্য এলাকায় তীব্র ভাঙন রয়েছে। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাকিস্তান আমলে কালুরঘাট সেতু থেকে বাকলিয়া বলিরহাট অংশ পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর তীরে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে তা বিলীন হয়ে যায়। অরক্ষিত হয়ে পড়ে নদীর তীর। দেখা দেয় ভাঙন। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের পানি বাড়ায় ৩০ বছর ধরে ভাঙন তীব্র রূপ নেয়। এতে শত শত ঘরবাড়ি, দোকান পানিতে তলিয়ে যায়। একই সঙ্গে ফসলি জমি ও ক্ষেত-খামারও তলিয়ে যায়।
বজ্রঘোনা এলাকার জৈনক বাসিন্দা বলেন, জেলেপাড়ার হরিপদ দাস, মৃণাল দাস জানান, ১০ বছর আগে তাদের ঘরের অর্ধেকাংশ নদীতে তলিয়ে যায়। চলতি মৌসুমে জেলেপাড়ার অন্তত ২০-২৫টি ঘর ভাঙনের মুখে রয়েছে। দ্রুত ভাঙনরোধের উদ্যোগ না নিলে এসব ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, গত তিন বছর ধরে নদীর পানি বিপদসীমায় প্রবাহিত হওয়ায় ভাঙনও তীব্র ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘুর্ণিঝড়-পরবর্তীতে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। এছাড়াও জোয়ারের পানিতেও ভাঙন কর্ণফুলী। তীব্র ভাঙনের মুখে রয়েছে শত শত পরিবার।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) কর্ণফুলী নদীর তীর সংরক্ষণ ও ভাঙনরোধে বড় প্রকল্প নিয়েছে। আউটার রিং রোড দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পটি সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়িত হবে। প্রায় ১ হাজার ৯৭৮ কোটি ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষে চাক্তাই খালের মুখ থেকে শুরু হয়ে কালুরঘাট ব্রিজ পর্যন্ত বিস্তৃত ফোর লেন বিশিষ্ট রিং রোডের দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে আট কিলোমিটার। উচ্চতা ২৪ ফুট এবং চওড়া হবে ৮০ ফুট। এতে ১২টি খালের প্রতিটির মুখে পাম্পসহ জোয়ার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থ্ া(টাইডাল রেগুলেটর উয়িদ পাম্প) থাকবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাকলিয়ার ভাঙনরোধ হবে বলে জানায় সিডিএ ও এলাকাবাসী।
১৮ নং পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হারুন উর রশিদ বলেন, ৭ শতাধিক পরিবার ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। অব্যাহত ভাঙনে অনেক ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্ষাকাল ছাড়াও শুষ্ক মৌসুমেও নদী ভাঙন দেখা দেয়। অমাবস্যা আর পূর্ণিমা তিথিতে নদীর পানি বেড়ে এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এসময়ও ভাঙন দেখা দেয়। তিনি বলেন, সিডিএ’র আউটার রিংরোড প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাকলিয়াবাসী ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে। প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
নগরীর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের কর্ণফুলীর তীরবর্তী এলাকা নদী ভাঙ্গনে তীব্র আকার ধারন করছে।
Date:
Share post: