ইহুদি, মুসলমান এবং খ্রিস্টানদের জন্য পবিত্র জেরুজালেম
ওয়েস্টার্ন ওয়ালের পুরুষদের অংশে শোনা যাচ্ছে প্রার্থনার শব্দ।
নারীদের অংশ অনেকটাই নীরব। চুনাপাথর দিয়ে বানানো প্রাচীন এই দেয়ালটি প্লেস অফ উইপিং বা কান্নার যায়গা নামেও পরিচিত।
এই দেয়ালটি ধরে প্রার্থনা করেন ইহুদি ধর্মাবলম্বীরা। দেয়ালের ফাঁক ফোকরে অসংখ্য টুকরো টুকরো কাগজ গুজে রাখা।
সেগুলোর মধ্যে লেখা আছে এখানে আসা মানুষজনের প্রার্থনা। সেখানে নারী ও পুরুষদের একসাথে প্রার্থনার জন্য একটি নির্দিষ্ট যায়গার দাবিতে প্রচারণা চালাচ্ছেন নারী পুরোহিত র্যবাই লরা জেনা ক্লাউজনার বলছিলেন “আমি রয়েছি নারীদের অংশে। পুরুষদের অংশের চেয়ে যা ছোট। যে শব্দ আপনি শুনতে পাচ্ছেন তা পুরুষদের অংশ থেকে আসছে।”
ওয়েস্টার্ন ওয়ালে পুরুষের উচ্চকণ্ঠই কানে বেশি আসে কেননা সেখানে নারীদের উচ্চস্বরে ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করা নিষেধ।
প্রার্থনার চাদর গায়ে জড়ানো নিষেধ, এমনকি উচ্চকণ্ঠে ধর্মীয় গান করাও নিষেধ। উদারপন্থীরা এসব নিয়মের পরিবর্তন চান। তারা পরিবর্তনের অংশ হিসেবে নারী পুরোহিতদের নেতৃত্বে প্রার্থনায় অংশ নেন। ওয়েস্টার্ন ওয়ালে এমন উদ্যোগ অবশ্য বাধার মুখোমুখি হয়েছে।
কট্টপরন্থীদের সাথে উদারপন্থীদের হাতাহাতি এমনকি সংঘর্ষ পর্যন্ত হয়েছে বলছিলেন র্যবাই ক্লাউজনার।
“এই যায়গাটার দেখাশোনা করেন খুবই, খুবই গোড়া একটি ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ। মেয়েদের দল এখানে প্রার্থনা করতে এলে এখানে সংঘর্ষও হয়েছে। আমার গায়ে পুরুষদের অংশ থেকে চেয়ার ছুড়ে মারা হয়েছে এমন ঘটনাও ঘটেছে। ব্যাগে ভরে মল ছুড়ে মারা হয়েছে। চিন্তা করুন কেউ একজন ব্যাগে ভরে মল নিয়ে এসেছে যাতে তারা সেটা মেয়েদের গায়ে ছুড়ে মারতে পারে” বলছিলেন তিনি।ওয়েস্টার্ন ওয়াল – যেটি ইহুদিদের পবিত্র স্থান
গোড়া ও উদারপন্থী ইহুদিদের বিবাদ ইসরাইলে নতুন কিছু নয়। কিন্তু ইদানীং তা বড় রাজনৈতিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতাইহাহু নারী ও পুরুষদের একসাথে প্রার্থনার জন্য একটি নির্দিষ্ট যায়গার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তা থেকে পিছু হটেছেন।
আর তাতে ক্ষুব্ধ ইহুদিদের অনেকেই। বিশেষ করে অভিবাসী ইহুদিরা। যাদের বসতি যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনে। ইসরাইলের টিকে থাকার জন্য দরকারি অর্থের বিশাল অংশই আসে এই অভিবাসী ইহুদিদের কাছ থেকে। র্যবাই ক্লাউজনার মনে করেন তাদের ঠকিয়েছেন বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু।
“ইসরাইলি সরকার রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য বিদেশে থাকা লক্ষ লক্ষ ইহুদিদের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি অভিবাসীদের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভালো হবে না”
কিন্তু নারী পুরুষদের একসাথে প্রার্থনার বিষয়টিকে গোড়া ইহুদিরা পুরো ধর্মের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে। তাদের কাছে এমন পরিবর্তন ধর্মকে দূষিত করার সামিল। আলট্রা অর্থোডক্স বলে পরিচিত ইহুদিদের র্যবাই স্মুয়েল জপাবোভিচ এমন ধারনায় বিশ্বাসীদের একজন। ইসলাম খ্রীষ্টান ও ইহুদি – তিন ধর্মের কাছেই পবিত্র এই জায়গাটি
“সনাতনপন্থী হিসেবে আমাদের লক্ষ হলো ধর্মীয় রীতিনীতি, আচার, ঐতিহ্যকে বিশুদ্ধ রাখা। যে কোন মূল্যেই আমরা সেটি রক্ষা করবো। কারণ ইহুদীবাদের মূল ভাবধারা যদি দূষিত হয় তাহলে তো ইহুদি ধর্মই বেশিদিন টিকে থাকতে পারবে না” বলছিলেন তিনি।
ইহুদি ধর্মে বিশুদ্ধতাতে খুবই গুরুত্ব দেয়া হলেও উদারপন্থী বিশ্বাসীদের সংখ্যাও ক্রমশই বাড়ছে। কিন্তু র্যবাই জপাবোভিচ বলছেন ইহুদি ধর্মে উদারপন্থীদের কোন যায়গাই নেই।
তিনি বলছিলেন “যদি নারী পুরুষের একসাথে প্রার্থনার জন্য একটি নির্দিষ্ট যায়গার দাবি যদি মেনে নেয়া হয় শুধুমাত্র এই জন্য যে কিছু মানুষ বিকল্প ধারার ইহুদীবাদে বিশ্বাস করে আর সেটিকে স্বীকৃতি দিতেই এটি করা হচ্ছে। আমরা সেটি কিছুতেই মেনে নেবো না”
শুধু প্রার্থনার যায়গা নিয়ে তৈরি হওয়া দ্বন্দ্ব এখন আর সেখানেই সীমাবদ্ধ নেই। আর কট্টরপন্থী ও গোড়া ইহুদিদের এমন বিবাদের মাঝে ইসরাইলি সরকারের ভাষ্য হলো সবাইকে খুশি করবে তেমন সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন তারা।