ঘোষকের কথায় মনে হলো আর কদিন পরই শুরু হবে চার-ছক্কার ক্রিকেট! যদিও শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের কনফারেন্স রুমের বাইরের মাঠে ‘ম্যাচ সিনারিও’ অনুশীলনে ব্যাটসম্যানদের ধৈর্যের পরীক্ষাই নিচ্ছিলেন জাতীয় দলের হেড কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে।
আসন্ন বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের টাইটেল স্পন্সরশিপ ঘোষণাকালে মঞ্চে উপবিষ্ট একজনের বৃষ্টি নিয়ে আশঙ্কাকেও অমূলক বলছিল গতকাল দুপুরের আকাশ। তাতে রকেট সিরিজের শুভযাত্রায় সম্ভবত বাধার দেয়াল উঠে যাচ্ছে। এ সুখবরের সৌরভ নিয়েই আজ রাতে ঢাকায় নামছে স্টিভেন স্মিথের দল।
আশা-নিরাশার দোলাচলে শুধু সফরকারীদের দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচটাই। গতকাল পূর্বনির্ধারিত ভেন্যু ফতুল্লা আর বিকল্প হিসেবে বিকেএসপি পরিদর্শন করে এসে এখনো ‘চূড়ান্ত রায়’ মেলেনি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার তরফে।
প্রস্তুতি ম্যাচের ভেন্যু ফতুল্লা প্রস্তুত নয়। তাই গত দুই দিন ধরে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার দুই প্রতিনিধিকে নিয়ে এ-মাঠ ও-মাঠ ঘুরে বেড়াচ্ছে বিসিবির সংশ্লিষ্টরা। আবহটা এমন যে, অতিথি দল যে মাঠে রাজি হবে, ২২-২৩ আগস্টের প্রস্তুতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে সে মাঠেই।
তবে গতকাল বিসিবি কিছুটা হলেও স্ট্যান্স বদলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিবির এক ঊর্ধ্বতন জানিয়েছেন, ‘ফতুল্লাও আমরা যথাসময়ে তৈরি করে ফেলব। যদি সেটা না-ও হয় বিকল্প হিসেবে বিকেএসপি
একদম তৈরি আছে। বিদেশ সফরে আমরাও দূরের মাঠে গিয়ে খেলি।
তাই অস্ট্রেলিয়ারও না খেলার কোনো কারণ নেই। ’ কিন্তু ইউল্যাব, ফতুল্লা এবং বিকেএসপি ঘুরে এসে গতরাতেও চূড়ান্ত অভিমত জানায়নি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিদল, জানিয়েছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী, ‘ওরা তিনটি ভেন্যুই ঘুরে দেখেছে। আশা করি কাল (আজ) সকালের মধ্যে জানতে পারব। ’
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে প্রস্তুতি ম্যাচটি বিকেএসপিতে নিতেই বেশি আগ্রহী বিসিবি। অন্যদিকে সাভারের ওই ভেন্যুর ব্যাপারে শুরু থেকেই অস্ট্রেলিয়ার আপত্তি ছিল দূরত্বের কারণে। তাতে শেষমেশ কি দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচটাই বাতিল করে দিতে পারে অস্ট্রেলিয়া?
বিসিবির প্রধান নির্বাহী স্বভাবতই সে উত্তর খুঁজতে আগ্রহী নন, ‘দেখুন, আমরা মাঠ তৈরি রাখব। এখন খেলা না খেলাটা ওদের ব্যাপার। তা ছাড়া প্রকৃতি তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। বৃষ্টির কারণে যদি খেলা না হয়, তাহলে কী করব?’ ক্রিকেটের কুটিল জগতে অতিথি দলের প্রস্তুতিতে বিঘ্ন ঘটানোর রেওয়াজ রয়েছে। তাতে দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ কোনো কারণে যদি না-ই হয়, তাতে বাংলাদেশ দলের বিষণ্নতা রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই!
বরং পুরো দল ডুবে ম্যাচ পরিস্থিতিতে ব্যাটিং প্রস্তুতি নিয়ে। মোট ক্রিকেটার ১৭ জন। একে একে ব্যাটসম্যানরা ক্রিজে গেছেন চারপাশে ১১ ফিল্ডারকে নিয়ে। কল্পিত এ ম্যাচে হার-জিত নেই, একটি রান কিংবা উইকেটও যোগ হবে না কারোর ক্যারিয়ারে। তবু সবাই প্রচণ্ড সিরিয়াস।
সামান্য ভুল-চুক হলেই যে ভঙ্গিতে শিষ্যদের ‘বোঝাচ্ছিলেন’ হাতুরাসিংহে, তা শ্রুতিমধুর হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে! মোসাদ্দেক হোসেন, তামিম ইকবাল, সাব্বির রহমান, নাসির হোসেনদেরই বেশি সময় টিকে থাকতে দেখা গেছে ক্রিজে।
বল হাতে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামই সফলতম, তবে পেসার শফিউল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদও কঠিন পরীক্ষা নিয়েছেন ব্যাটসম্যানদের। তাসকিনের বেরিয়ে যাওয়া বল ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়া দেখে একটু অসহায়ই দেখাচ্ছিল তামিমকে।
তবে এর সবই মহড়া। অনেক দিন পর ঘরের মাঠে সাদা পোশাকে মুশফিকুর রহিমদের দেখার দিনে অন্যতম আকর্ষণ ছিল মিরপুরের আউটফিল্ডও। সংস্কারের পর গতকালই যে প্রথম বল ছোটাছুটি করেছে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের প্রথম টেস্টের ভেন্যুতে।
মাটি-ঘাস সব পাল্টানোর পরও কেন যে মাঠটা সবুজ দেখাচ্ছে না, কে জানে। সঙ্গে আশঙ্কা ছিল, আউটফিল্ড না আবার ধীর গতির হয়। টানা বর্ষণে এখনো মাটি কিছুটা নরম, তার ওপর ঘাসও পুরোপুরি ছেঁটে ম্যাচের জন্য তৈরি করা হয়নি।
তাতে ২৭ আগস্ট শুরু হতে যাওয়া টেস্টে মিরপুরের আউটফিল্ডের গতি আরো কিছুটা বাড়বে নিশ্চয়। ১১ বছর বিরতির পর অস্ট্রেলিয়া যত এগিয়ে আসছে, অনিশ্চয়তাও যেন ততই কাটছে!