চাপের মুখে নির্বাচন কমিশন কারও সঙ্গে আপস বা কারও কাছে আত্মসমর্পণ করবে না বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্চাবন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে এ কথা জানান সিইসি। দুই দিনের টানা সংলাপের দ্বিতীয় দিন আজ বিভিন্ন টেলিভিশন, রেডিও এবং অনলাইন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিনের সঙ্গে বৈঠকে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘কারও কাছে যদি আমরা আত্মসমর্পণ করি, তাহলে এটা আমাদের দুর্বলতা। এটা আমরা করব না। কারণ আমাদের কারও কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ইসি সম্পূর্ণ স্বাধীন সত্ত্বা।’
বৈঠকে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, নির্বাচনী আইনের যথাযথ প্রয়োগ, নির্বাচন কমিশনকে চাপের মুখে নতি স্বীকার না করাসহ নানা পরামর্শ দেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বর্তমান কমিশন নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের আশ্বাস দিয়ে আসছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর বর্জনের কারণে এই কমিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সব দলকে আগামী নির্বাচনে নিয়ে আসা। এ জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশন সবাইকে আস্থায় এনে কাজ করার কথা জানিয়ে আসছেন বারবার।
গণমাধ্যম কর্মীদেরকে সিইসি বলেন, ‘চাপের মুখেও কম্প্রোমাইজ না করার অঙ্গীকার যদি থাকে, তাতেই কাজ হবে। কম্প্রোমাইজের সুযোগ নেই।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথনকশা ঘোষণার পর নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি এবং সবশেষে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের কথা জানায় নির্বাচন কমিশন। গত ৩১ জুলাই প্রথম তারা বৈঠক করে নাগরিক সমাজের সঙ্গে। আর ১৬ এবং ১৭ আগস্ট বৈঠক হয় গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে। ২৪ আগস্ট থেকে বৈঠক হবে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে। ওই দিন ছাড়াও ২৮ ও ৩০ আগস্ট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসবে নির্বাচন কমিশন।
রাজনৈতিক দলের সংলাপে কারা আসবেন, না আসবেন, তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কোনো ভাবনা নেই বলে জানান সিইসি। তিনি বলেন, ‘তাদের কথা শুনব, আমাদের কথা তারা শুনবেন। এ নিয়ে কে আসবে- না আসবে তা নিয়ে আমাদের কোনো ইস্যু থাকবে না।’
গণমাধ্যম কর্মীরা নির্বাচন কমিশনকে আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার তাগিদ দেন। পরে সিইসি বলেন, ‘আগামী ২৪ অগাস্ট থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির যে সংলাপ শুরু হবে, সেখানে কারো ভোটে আসা-না আসার বিষয়ে কোনো আলোচনা হবে না।’
নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত কারো দাবির মুখে বা কারো না চাওয়ার উপর নির্ভর করবে না বলেও জানান সিইসি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেনাবাহিনী মোতায়েন কোনো দলের চাওয়া না চাওয়ার ওপর নির্ভর করবে না।
গত ৩১ জুলাই নাগরিক সমাজের সঙ্গে সংলাপেও বেশিরভাগই একাদশ সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব দেন। কেউ কেউ অবশ্য বিরোধিতা করে বলেন, সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেয়া উচিত হবে না।
সংলাপের বাইরে বিএনপি বরাবর নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে আসছে। নেতাদের দাবি, সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকলে দলের ক্যাডাররা ভোট প্রভাবিত করার সাহস পাবে না। তবে আওয়ামী লীগ এর বিরোধী। তারা সেনাবাহিনীকে নির্বাচন বা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে রাখতেই পছন্দ করে।
সিইসি বলেন, ‘পরিবেশ পরিস্থিতিতে যদি প্রয়োজন মনে করি, সবই আসবে। দরকার মনে না করলে সেনাবাহিনী আসবে না। এটা সম্পূর্ণভাবে ইসির ওপর ছেড়ে দিতে হবে।’