ছয়দিন ধরে হাসপাতালে কোনো চিকিৎসা নেই। হাসপাতালের গেইটের সামনে প্রতিদিন শতশত রোগী এসে ফিরে যাচ্ছেন হতাশা নিয়ে। অনেকে আবার জোর করে ভেতরে প্রবেশ করতে গিয়ে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন আনসার সদস্যদের সাথে। রোগীরা হাসপাতাল বন্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ফিরে যাচ্ছেন। এদিকে আবার যেসকল সাধারণ রোগী ভর্তি রয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকে হাসপাতাল ত্যাগ করছেন।
সোমবার (২ জুন) সকালে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে গত বুধবার (২৮ মে) এই হাসপাতালের কর্মীদের সঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের হাতাহাতি, মারামারি ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। ফলে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা কর্মবিরতিতে যান। এতে হাসপাতালের সকল চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যায়। আজ চতুর্থ দিনের মতো হাসপাতালের সকল সেবা বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের প্রধান গেইটের সামনে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা রোগী এবং তাদের স্বজনরা দাঁড়িয়ে আছেন। প্রধান গেইটের পাশে ছোট একটা গেইট রয়েছে। অনেকে আবার সেই গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে আনসার সদস্যরা বাঁধা প্রদান করেন। এতে অনেককে আবার আনসার সদস্যদের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়তেও দেখা গেছে।
এসময় রাজধানীর টঙ্গী থেকে আসা সারোয়ার আহমেদ নামের একজন রোগী বলেন, এক মাস আগে এই হাসপাতালে অপারেশন করেছি। আজকে ডাক্তার দেখানোর ডেইট। কিন্তু, এসে দেখি হাসপাতাল বন্ধ। আর কয়েকদিন পরে ঈদ। এখন কি করবো কিচ্ছু বুজতেছি না।
আমেনা বেগম নামের আরেকজন রোগী বলেন, পটুয়াখালী থেকে এসেছি ডাক্তার দেখানোর জন্য। এভাবে যদি হাসপাতাল বন্ধ থাকে, তাহলে আমাদের মতো গরীব মানুষের কি হবে! সরকার কি এগুলো দেখে না! নাকি দেখেও না দেখার ভান করছে।
হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করতে বেশ কয়েকজন সিনিয়র স্টাফ নার্সকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের কাছে থেকে হাসপাতাল খোলার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তারা জানান, আমরা কোনো কথা বলতে পারবো না। যা বলবেন, আমাদের পরিচালক স্যার বলবেন।
এদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে হাসপাতালে একটি প্রতিনিধিদলকে আসতে দেখা গেছে। প্রতিনিধিদলটি আহতদের সঙ্গে এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ অন্যান্য সেবাদানকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা করছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়াও হাসপাতালের ভেতরে পুলিশ এবং আনসার সদস্যদেরকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
হাসপাতালের চতুর্থ তলায় দু’দিন আগেও ২৫ জন সাধারণ রোগী ছিলেন। কিন্তু, এখন বর্তমানে ১৪ থেকে ১৫ জন রোগী আছে। বাকি ৯-১০ জন হাসপাতাল ত্যাগ করেছে বলেও জানা গেছে।
কাউসার নামের একজন সাধারণ রোগী বলেন, যেদিন থেকে হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে, ঐদিন থেকেই সকল চিকিৎসা ও সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। বুধবারে অনেক রোগী চলে যাওয়ার পর সবশেষে রোগী ছিল ২৫ জনের মতো। কিন্তু, গত দু’দিনে প্রায় ৯-১০ জন রোগী হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছে। কি আর করবে, চিকিৎসা না পেলে মানুষ থাকবে কিভাবে। আমরা এই সমস্যার সমাধান চাই।