শেষ মুহূর্তে জঙ্গি রোহান ইমতিয়াজ ও অন্যতম সহযোগী তাহমিদের সঙ্গে আর্টিজানের ছাদে হাসনাতের শলাপরামর্শ (বাঁয়ে)। ব্রিফিং শেষে বেরিয়ে যাচ্ছেন হাসনাত। এ সময় সশস্ত্র অবস্থায় ছিল জঙ্গিরা (গোল চিহ্নিত) -সংগৃহীত
। বলা যায়, খলনায়ক।
তিনি নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে হামলা পরিচালনা ও মনিটরিং করেন। নানাভাবে যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদান করেন দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন মাধ্যমে। গুরুত্বপূর্ণ এ ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একেবারে স্বাভাবিক।
আর এতটাই স্বাভাবিক ছিলেন যে, বীভৎস হত্যাযজ্ঞের মধ্যে ভাত রান্নার ব্যবস্থা করে সপরিবারে রাতের খাওয়া-দাওয়াও সেরে নেন। সঙ্গে থাকা কানাডা প্রবাসী ছাত্র তাহমিদ খান ছিলেন তার অন্যতম সহযোগী। নিজ হাতে অস্ত্র চালিয়ে সেও এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞে অংশ নেয়। বিলম্বে হলেও দুটি স্টিল ছবি ও তার মোবাইল ফোনের অধিকতর ফরেনসিক রিপোর্ট থেকে এসব চাঞ্চল্যকর ক্লু বেরিয়ে এসেছে।
প্রসঙ্গত, ঘটনার পর শুরু থেকেই একটি পক্ষ হাসনাত করিম ও তাহমিদ খানকে নির্দোষ প্রমাণ করতে নানাভাবে সক্রিয় ছিল। যে কারণে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের প্রমাণ নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তিও তৈরি হয়। তবে ঘটনার ৩৬ দিনের মাথায় শনিবার সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থার কাছে হাসনাত করিমের জড়িত থাকার অকাট্য প্রমাণ মিলেছে। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরতে আজ-কালের মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হতে পারে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের একটি গোয়েন্দা সূত্র যুগান্তরকে জানিয়েছে, হামলার পরদিন আর্টিজান রেস্টুরেন্টের ছাদে বৈঠকরত অবস্থায় ক্যামেরাবন্দি হন হাসনাত করিম, তাহমিদ খান ও নিহত জঙ্গি রোহান ইমতিয়াজ। তিনজনের এই এক্সক্লুসিভ গ্র“প ছবি বিশ্লেষণ করে জঙ্গি হামলার সময় তাদের ভূমিকার বিষয়টি তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। হামলার সঙ্গে হাসনাত ও তাহমিদের সম্পৃক্ততার অকাট্য প্রমাণ হিসেবে এই ছবি সরকারের উচ্চ পর্যায়কেও দেখানো হয়। এরপর উপর মহলের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী আইনি পদক্ষেপগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
গুলশান হামলায় হাসনাত করিমের ভূমিকা :
সূত্র জানায়, হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলাকারীদের সঙ্গে হাসনাত করিমের জড়িত থাকার বিষয়টি নিয়ে আর কোনো সন্দেহ নেই। রাত ৮টা ৪৬ মিনিটে রেস্টুরেন্টে হামলা হয়। এর ১১ মিনিটের মাথায় ৮টা ৫৭ মিনিটে হাসনাতের মোবাইল ফোনটি সন্দেহ করার মতো বেশ কিছু কাজে সক্রিয় হয়ে ওঠে। হাসনাত করিম হামলার খবরাখবর জানাতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের ওপর নজর রাখতে শুরু করেন। ধারণা করা হচ্ছে, হামলা শুরুর পর দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া জানার জন্য তিনি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের ওপর নজর রাখছিলেন। একইসঙ্গে রেস্টুরেন্টের বাইরে আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা ও বাইরের পরিস্থিতি সম্পর্কে জঙ্গিদের আপডেট রাখছিলেন তিনি।
সূত্র জানায়, তিনি হামলার সময় তার মোবাইল ফোন থেকে উইকারসহ বেশ কয়েকটি অ্যাপসও ডাউনলোড করেন। বিভিন্ন স্থানে বার্তা আদান-প্রদানের কাজে এসব অ্যাপস ব্যবহার করে জঙ্গিরা। এছাড়া হামলায় নিহত বিদেশী নাগরিকদের ক্ষত-বিক্ষত দেহের ছবি পাঠানোর কাজেও হাসনাতের মোবাইল ফোন ব্যবহৃত হয়। উগ্রবাদীদের মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক মুখপত্র ‘আমাক নিউজ এজেন্সি’ ও ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের গুপ্তচর রিটা কার্টৎজের ওয়েব পোর্টাল সাইট ইন্টেলিজেন্সের কাছেও ওইসব ছবি পাঠানো হয়।
যৌথ তদন্ত দলের একজন উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, হামলার পরদিন কাকডাকা ভোরে জঙ্গি রোহান ইমতিয়াজ, তাহমিদ খান ও হাসনাত করিমকে রেস্টুরেন্টের ছাদে ঘনিষ্ঠভাবে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখা যায়। পাশের ভবন থেকে তাদের এই গুরুত্বপূর্ণ সহ-অবস্থানের কয়েকটি ছবি তুলতে সক্ষম হন পার্শ্ববর্তী ভবনের একজন বাসিন্দা। ভবনের ছাদে তিনজনের আলাপরত অবস্থার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও দুর্লভ মুহূর্তের দুটি ছবি সম্প্রতি যুগান্তরের কাছে আসে।
এতে দেখা যায়, জঙ্গি রোহান ইমতিয়াজের গলায় সামরিক কায়দায় ঝোলানো আছে একটি অত্যাধুনিক অস্ত্র। আর তার পাশে ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তাহমিদ খান ও হাসনাত করিম। ছবিতে তাহমিদের হাতেও অস্ত্র দেখা যায়। তিনজনই ঘনিষ্ঠ ভঙ্গিতে একেবারে স্বাভাবিকভাবে একে অপরের সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন।
এই ছবি বিশ্লেষণ করে যৌথ তদন্ত দলের একজন দায়িত্বশীল গোয়েন্দা কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ছবিতে দেখা যাচ্ছে জঙ্গি রোহানের গলায় ভারি অস্ত্র ঝোলানো থাকলেও সে সতর্ক অবস্থানে নেই। দুটো হাতই পেছনে রেখে সে অনেকটাই ‘নরমাল’ (স্বাভাবিক) ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। অন্যদিকে তাহমিদ খানের হাতে দেখা যায় স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। পিস্তল আকৃতির সেই অস্ত্রটি তিনি সতর্কভাবে ধরে আছে। অস্ত্র পরিচালনার আগ মুহূর্তে