বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া গেজেট অবৈধ ঘোষণার দাবি এবং তাকে শপথ পড়ানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট মামলা খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট।
আদালতের এই আদেশের ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ নিতে আর কোনো বাধা থাকল না বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন।
এ রিট মামলার ওপর মঙ্গল ও বুধবার কয়েক দফা শুনানির পর বৃহস্পতিবার তা খারিজ করে আদেশ দেয় বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চ।
ইশরাককে মেয়রের চেয়ারে বসাতে এক সপ্তাহ ধরে তার সমর্থকদের আন্দোলনের মধ্যে আদালতের এই সিদ্ধান্ত এল।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সবশেষ নির্বাচন হয়। তাতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে।
এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয় সেজন্য গত ১৪ মে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ।
অন্যদিকে ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে ওইদিনই আন্দোলন শুরু করেন তার সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনে এক সপ্তাহ ধরে কার্যত অচল হয়ে আছে নগর ভবন। তবে আইনি জটিলতার কথা বলে তার শপথের আয়োজন করেনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এক ফেইসবুক পোস্টে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়ার পদত্যাগ দাবি করেন ইশরাক। তার সমর্থকরাও একই দাবি তোলেন।
বুধবার যখন হাই কোর্টে এ মামলার শুনানি চলছিল, তখনো মৎস্যভবন ও কাকরাইল এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন ইশরাক সমর্থকরা।
এর পাল্টায় বুধবার নির্বাচন ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে অবিলম্বে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি জানায় নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি।
দলটির অভিযোগ, ইশরাককে মেয়র ঘোষণার গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতিত্ব করেছে।
ওই অভিযোগ অস্বীকার করে নির্বাচন কমিশনের তরফে বলা হয়, এনসিপি দাবি ‘রাজনৈতিক’; নির্বাচনি ট্রাইবুনালের রায়ে ইসির পক্ষভুক্ত হওয়ার নজির নেই।
এ রিট মামলার ওপর মঙ্গলবার দুই দফা শুনানির পর বুধবার আদেশের জন্য রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেদিন আবার দুই পক্ষের শুনানি হয় এবং পরে আদালত আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার দিন রাখে।
রিট আবেদনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আইনজীবী কায়সার কামাল এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান মিলন। অন্যদিকে রিটকারী পক্ষে জবাব দেন আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন।
ইশরাকের পক্ষে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায়ে কয়েকটি ‘ভুল’ থাকার দাবি তুলে রুল জারির আর্জি জানান মোহাম্মদ হোসেন।
অন্যদিকে মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায় ও আদেশে সংক্ষুব্ধ হলে নির্বাচনি আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করা যায়। সেটা করতে পারে মামলার বিবাদী পক্ষ। সেখানে আপিল না করে একজন আইনজীবী হাই কোর্টে রিট মামলা করতে পারেন না।
বৃহস্পতিবার আদালতের আদেশ পক্ষে পাওয়ার পর ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, “যিনি এই রিট মামলা করেছিলেন, তার এ ধরনের মামলা করার এখতিয়ার নেই। তাছাড়া নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আপিল ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার সুযোগ ছিল।
“ফলে এ ধরনের বিষয়ের জন্য এটা সঠিক ফোরাম নয়। এ দুটি পর্যবেক্ষণ দিয়ে আদালত আজ রিট সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন।”
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার দিকে ইংগিত করে ইশরাকের আইনজীবী বলেন, “এ বিষয়ে সরকারের একজন উপদেষ্টার কর্মকাণ্ড ইতোমধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তিনি একটি দলের পক্ষ নিয়ে এ কাজ করেছেন। আমরা আশা করব, আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধ দেখিয়ে সরকার এখন ইশরাক হোসেনের শপথ নেওয়ার ব্যবস্থা করবে।”