সিলেটে জমিয়তে ইসলাম থেকে এমপি হয়েছিলেন মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী। দলের নানা পর্যায়ে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। বিগত সংসদ নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই দেখা করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। এরপর থেকে মাওলানা শাহীনুর পাশাকে নিয়ে ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে ও বাইরে তোলপাড় শুরু হয়। দেখা দেয় তুমুল বিতর্কও। আর সেই বিতর্কের কারণে শাহীনুর পাশার সহ-সভাপতি পদটি জমিয়তের কমিটি থেকে স্থগিত করা হয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন গত বছরের ২৩শে নভেম্বর। দল তার পদ স্থগিত করার কারণে তিনি একা হয়ে গিয়েছিলেন। এরপরও নির্বাচন থেকে সরে যাননি তিনি। শেষ পর্যন্ত বিগত নির্বাচনে শাহীনুর পাশা তৃণমূল বিএনপি’র প্রার্থী হয়ে সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) আসন থেকে এমপি প্রার্থী হয়েছিলেন। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এমএ মান্নানের কাছে বিশাল ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন তিনি। এরপর থেকে অনেকটা নিশ্চুপ ছিলেন তিনি। গত মাসে সিলেটের রেজিস্ট্রি মাঠে ঐক্যবদ্ধ জমিয়তে ইসলামীর সমাবেশে হাজির হয়েছিলেন শাহীনুর পাশা। সেখানে উপস্থিত হলেও তাকে মঞ্চে ডাকা হয়নি।
মঞ্চের সামনে চেয়ারে শ্রোতা হয়ে বসেছিলেন। এই অবস্থায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের হাত ধরে নতুন ঠিকানায় পাড়ি জমালেন তিনি। নতুন গন্তব্য বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল তিনি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ করেছেন। এ সময় তার পাশে মাওলানা মামুনুল হক উপস্থিত ছিলেন। বিকালে মানবজমিনকে শাহীনুর পাশা চৌধুরী জানিয়েছেন; এভাবে তো বসে থাকা যায় না। নতুন ঠিকানায় যোগ দিলাম। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সঙ্গে যুক্ত হলাম। এখন থেকে দলের সকল কার্যক্রমে সক্রিয় থাকার কথা বলেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে শাহীনুর পাশা বলেন- আমি জমিয়তের সহ- সভাপতি ছিলাম। গত মাসে সিলেটের সমাবেশে মনের টানে যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু দু’একজন লোকের কারণে যথাযথ সম্মান পাইনি। আর খেলাফত মজলিস তো ইসলামী ধারার বাইরে নয়। শায়খুল হাদিস (রহ.)ও এক সময় জমিয়তে ছিলেন। আমরা সবাই একই পরিবারের লোক। তিনি বলেন- নির্বাচনের জন্যই বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসে যাওয়া। যদিও বিষয়টি নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আলোচনা হয়নি; তবে জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর আমার আসনে তো এ দলের অন্য কোনো প্রার্থী নেই। এ কারণে তিনি দলের কাছে এমপি প্রার্থীর মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ সম্পাদক মাওলানা সামিউর রহমান মূসা জানিয়েছেন- আমাদের দলে লোভ দেখিয়ে কাউকে ঢুকানো হয় না। শাহীনুর পাশা চৌধুরী খেলাফত মজলিসের দলীয় নীতিমালা অনুসরণ করে যোগদানের ব্যাপারে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। দলের সাধারণ সব নিয়মকানুন মেনেই সদস্য ফরম পূরণ করেই দলে যোগ দেন। বর্তমানে শাহীনুর পাশা চৌধুরীকে কোনো পদ দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সামিউর রহমান মূসা বলেন, তিনি বর্তমানে দলের একজন সাধারণ সদস্য। আগামী জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দলের মজলিসে শূরার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকেই এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সংসদ নির্বাচন এলেই ইসলামী ঘরানার রাজনীতির মাঝে আলোচনায় থাকেন সাবেক এই সংসদ সদস্য। তাকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসে যোগদান করানোর ব্যাপারে আপনারা কী কোনো শর্ত দিয়েছেন- এই প্রশ্নের জবাবে মাওলানা মূসা জানান- তিনি অতীতের নির্বাচনে যা করেছেন, এর জন্য তিনি ক্ষমা চেয়ে, ভুল স্বীকার করেছেন। ভুল ভ্রান্তি তো মহান আল্লাহতায়ালাও ক্ষমা করে দেন। আমরা কোনো প্রকার শর্ত দিয়ে তাকে দলে যোগদান করাই নি। তিনি নিজ ইচ্ছা থেকেই যোগ দিয়েছেন। এদিকে মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী সিলেটের রাজনীতিতে পরিচিত মুখ। নিজ এলাকার চেয়ে সিলেটের রাজনীতিতে তিনি সব সময় আলোচিত হন। সিলেটে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে তিনি সরব ভূমিকা পালন করেন। রোহিঙ্গা ইস্যুর সময় লংমার্চ ইস্যুতে তাকে নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। তবে সেই বিতর্কের যুক্তি নিজেই খণ্ডন করেছিলেন। সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান রাজনীতিক আব্দুস সামাদ আজাদের দখলে ছিল আসনটি। ২০০৫ সালে তার মৃত্যুর পর যে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেই নির্বাচনে শাহীনুর পাশা চৌধুরী এমপি হয়েছিলেন। এরপর থেকে নানা সময় নির্বাচনে থাকলেও তার আর এমপি হওয়ার সুযোগ হয়নি।