এনামুল হক রাশেদী, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
১৪ বছর আগে চট্টগ্রাম শহরস্থ পাহাড়তলী থানার সেগুন বাগান তা’লীমুল কুরআন মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ হয়েছিল চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার পৌরসভাস্থ বনেদী পরিবার মাওলানা আবু তাহেরের শিশুপুত্র। ছেলেকে ফিরে পেতে তাঁর পিতা মাওলানা আবু তাহের তখন থানায় সাধারণ ডায়েরি সহ প্রশাসনিক দপ্তরে দপ্তরে অভিযোগ কিছুই বাদ রাখেন নি। তবুও কোন সন্ধান পাননি নিখোঁজ ছেলের।
৮ জুলাই’২২ ইং শুক্রবার বাঁশখালী পৌরসভাস্থ সাংবাদিক মিজান বিন তাহেরের বাড়ি মুখী উৎসুক জনতার ঢল। সবার মুখে একিই কথা, “সাংবাদিক মিজানের হারিয়ে যাওয়া ভাই ছফওয়ান ফিরে এসেছে।” ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ঘটনার অন্তরালের তথ্য দিলেন ১৪ বছর পর আপন নীড়ে ফিরে আসা টগবগে যুবক ছফওয়ান নিজেই। জানিয়েছে বাড়ি ফেরার গল্পও।
“২০০৮ সালের মাস, তারিখ,বার মনে নেই। আমাদের মাদ্রাসার সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলাম। তখন একটা গাড়ি আসল, তারা বললো তোমার নাম কি? আমি বল্লাম আমার নাম ছফওয়ান, এরপর তারা জানতে চাইল আমার বাড়ি কোথায়? আমি বললাম, আমার বাড়ি বাাঁশখালী, তারপর তারা আবার বললো বাঁশখালী ইকোপার্ক কোন দিকে তুমি চিন, আমি বললাম চিনি। এরপর তারা আমাকে তাদের গাড়িতে তুলে ইকোপার্ক নিয়ে গেল। পরবর্তীতে আমি মনে করেছিলাম তারা আমাকে বাড়ির সামনে রাস্তায় নামিয়ে দিবে। কিন্তু তা না করে নিয়ে গেল ঢাকায় । এরপর তারা আমার পাঞ্জাবি-পায়জমা খুলে আমাকে পেন্ট শার্ট পরিয়ে ভারতের কলকাতায় নিয়ে যায়।’
বাংলাদেশে ফেরার বর্ণনা দিতে গিয়ে ছফওয়ান বলেন, কলকাতায় দীর্ঘ ১৩-১৪ বছর তারা আমাকে দিয়ে রেস্টুরেন্টে কাজ করায়। পরবর্তীতে আমি ভারতে থাকা অবস্থায় এ.কে খান গ্রুপের মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিকতা নিয়ে স্মার্ট কার্ড করে আল্লাহর রহমতে অনেক কষ্টে দেশে আসি। এরপর বাংলাদেশে এসে এ. কে. খান গ্রুপে ৬-৮ মাস চাকরি করি। পরবর্তীতে আমি আমার মা-বাবা বাড়ি ঘরের খবর নিয়ে আস্তে আস্তে আমি মালিককে বলে ছুটি নিয়ে ঢাকা থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম আসি। চট্টগ্রামে এসে কিছু ই চিনতে পারছিনা। একটা সিএনজিকে বললাম আমি বাঁশখালী যাব কত টাকা নিবে। তখন সিএনজি ড্রাইভার আমাকে কর্ণফুলী নতুন ব্রিজ নামিয়ে দেয়। এরপর দেখলাম কর্ণফুলীতে তত্তার (কাঠের) ব্রিজ নেই। কিছুই চিনতে পারছি না। আরেকটি সিএনজি ড্রাইভারকে বললাম আমি বাঁশখালী যাব। তখন সে আমার কাছ থেকে ৮০০ টাকা নিয়ে বাঁশখালী নিয়ে আসল। তবুও আমি কিছু ই চিনতে পারছি না। ড্রাইভারকে বল্লাম আমাদের বাড়ির একটা মাদ্রাসা আছে, পরপর জিজ্ঞাসা করে আমি মাদ্রাসার সামনে আসি। এরপর থেকে এসে কিছুই চিনতে পারছি না। সব দেখি এলোমেলো। বিকেলে আমার ভাই মিজানের বাড়ি কোনটা, জিজ্ঞাসা করে বাড়িতে আসলাম। তখন কেউ দেখি আমাকে চিনছে না। পরবর্তীতে সবাই কে চিনেছি। তারাও আমাকে চিনেছে। আমি আল্লাহ পাকের দরবারে হাজারো শুকরিয়া আদায় করি। আমি আমার মা -ভাই -বোন আত্বীয় স্বজন সবাইকে চিনতে পারছি। আজ আমি আমার দেশ গ্রামের মানুষকে পেয়ে অনেক আনন্দিত হয়েছি। সবাই আমি এবং আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন।
ভাইকে খুঁজে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা পরিবারের সদস্যরা। ছফওয়ানের মেঝভাই সাংবাদিক মুহাম্মদ মিজান বিন তাহের বলেন, ‘অনেক বছর ভাইয়ের অপেক্ষায় ছিলাম। বাবাও তার খোঁজে এ দ্বার ওদ্বার ঘুরেছে। শুক্রবার বিকেলে আমার ভাই বাড়ি ফিরেছে। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া।’
উল্লেখ্য, ছফওয়ান দক্ষিণ চট্টগ্রামের দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল জামিয়া আল ইসলামিয়া জলদী মখজনুল উলুম (বাইঙ্গাপাড়া) বাঁশখালী বড় মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মাওলানা মোহাম্মদ আলীর নাতি। তার বাবা মাওলানা আবু তাহের লন্ডন ‘মসজিদুল আবরার’জামে মসজিদের খতিব ছিলেন, আল জামিয়াতুল আরবিয়া মদিনাতুল উলুম রাউজান দেওয়ানপুর মাদ্রাসার সাবেক মোহতামিম, সিএমবি আল মাদ্রাসাতুল ইসলামিয়া তানজিমুল উম্মাহ মাদ্রাসাসহ অসংখ্য দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।