রাজধানীর বাড্ডায় তানহা নামের পৌনে চার বছরের এক শিশুকে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে। রোববার বিকালে বাড্ডার আদর্শনগরের ৪ নম্বর সড়কের পাশে একটি বাসায় এ ঘটনা ঘটে।
পাশবিক নির্যাতনের পর শিশুটিকে পাশের বাড়ির বাথরুমে ফেলে রাখা হয়। পরে খবর পেয়ে স্বজনরা শিশুটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
রোববার রাত সাড়ে ১০টায় বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, একমাত্র মেয়ের লাশ সামনে নিয়ে বসে আছেন মা সুলতানা বেগম। কাঁদতে পারছেন না। কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে। শুধু বলছেন, আমার কী হতে কী হল। এখন আমি বাঁচব কাকে নিয়ে?
জানা গেছে, তানহার বাবা মেহেদী হাসান প্রাইভেটকার চালক। মা সুলতানা বেগম গৃহিণী। তারা একমাত্র মেয়ে তানহাকে নিয়ে থাকেন মধ্যবাড্ডার আদর্শনগর এলাকার মিনহাজ মিয়ার বাড়ি।
তানহার মা সুলতানা বেগম সময় নিউজকে জানান,তারা যে বাড়িতে থাকেন ওই বাড়িতে ভাড়া থাকতেন কলি নামে এক নারী ও তার স্বামী। তারা দু’দিন আগে এ বাসা থেকে ১০০ গজ দূরে পাশের বাড়িতে ভাড়ায় উঠেছেন।
তিনি বলেন, রোববার বিকাল সোয়া ৫টার দিকে তানহা আমাকে বলে কলি আন্টির বাসায় বেড়াতে যাব। আমি বলি যাও, তাড়াতাড়ি চলে এসো। বাসা থেকে বের হওয়ার পর সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেও ফিরছিল না তানহা।
সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে পাশের বাড়ির এক নারী বাথরুমে যান। তিনি দেখেন টয়লেটের কমোডে মাথা গোজানো অবস্থায় পড়ে আছে তানহা। সঙ্গে সঙ্গে তিনি এসে খবর দেন। এরপর গিয়ে দেখি মেয়ে আমার সেখানে পড়ে আছে।
আর তার গোপনাঙ্গ দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। প্রথমে স্থানীয় মেডিলিংক হাসপাতালে নিয়ে যাই, তারপর আল সামি ক্লিনিক এবং পরে বাড্ডা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু কোনো হাসপাতালের চিকিৎসকই দেখতে রাজি হলেন না। তাদের একই কথা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে বুঝতে পারলাম আমার মেয়ে মারা গেছে।
এরপর তাকে বাসায় নিয়ে আসি। ওই বাড়ির পাশের আরেকটি বাসায় বসে আছেন তানহার বাবা মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, সকালে বাসা থেকে বের হয়ে যাই, ফিরি রাতে।
আমারতো কোনো শত্রু নেই। এই বাসায় ১০ বছরের বেশি সময় ধরে আছি। কিন্তু কে আমার এমন সর্বনাশ করল। আমার মেয়ে গেছে, আরতো মেয়ে পাব না। আমি আমার মেয়ে হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
আমার মেয়ের ঘাতকের ফাঁসি চাই। বাড্ডা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) নজরুল ইসলাম বলেন, কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা জানা যায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের পর ওই শিশুকে হত্যা করা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে গুলশান জোনের ডিসি মোস্তাক আহমেদ বলেন, শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে এটা নিশ্চিত। তবে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে শিশুটির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, ঘাতক শনাক্ত করতে পুলিশ, ডিবিসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। আশা রাখি শিগগিরই ঘাতককে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে পারব।