বাংলাদেশে চলছে রান্নার গ্যাসের তীব্র সংকট
বাংলাদেশে এবছর দ্বিতীয় দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার, তা অবৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট।
ফলে পয়লা জুন থেকে বাসা-বাড়িতে গ্যাসের বিল বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছিল, তা আগামী মাস থেকে আর আদায় করতে পারবে না কর্তৃপক্ষ।
নাগরিক অভিজ্ঞতা
ঢাকার মগবাজারের মীরবাগ এলাকার বাসিন্দা মেহেরুন্নেসাকে সারাদিনের সমস্ত রান্নার কাজ শেষ করতে হয় সকাল আটটার আগেই।
কারণ এরপর তার বাসায় গ্যাস চলে যায়। “সকালে গ্যাস চলে যায়, দুপুর পর্যন্ত গ্যাস থাকে না । দুপুর দুইটার পর এলেও তা চলে যায় সন্ধ্যার দিকেই। আবার আসে রাত বারোটায়, তখন এলে গ্যাস দিয়ে কি করবো?” তার প্রশ্ন।
তিনি জানান, একারণে তাদেরকে সিলিন্ডারও ব্যবহার করতে হয়।
গ্যাস না পেলেও বরাবরের মতই গত জুন মাস থেকে দেড়শো টাকা বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে তাকে গ্যাসের বিল হিসেবে। আবার বাড়তি খরচ করে সিলিন্ডারও ব্যবহার করছেন।
মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরাসহ রাজধানীর আরও বেশ কিছু এলাকায় দিনের বেলা গ্যাসের সরবরাহ থাকে না বলে জানান বাসিন্দারা।
ফলে গ্যাসের বর্ধিত দাম কার্যকরের সিদ্ধান্ত স্বাভাবিকভাবেই স্বস্তি দিতে পারেনি গ্রাহকদের।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব-এর পক্ষ থেকে আদালতে রিট করা হলে, তার শুনানি শেষে হাইকোর্ট দ্বিতীয় দফায় বাড়ানো দাম অবৈধ বলে রুল দিয়েছে।
তবে বাংলাদেশের জ্বালানী নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিইআরসি চাইলে আবার শুনানি করে দাম বাড়াতে পারবে সে সুযোগ রয়েছে।
জ্বালানী বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম তামিম এমনটাই জানান।
তিনি বলেন, “বিইআরসির আইন অনুসারে, ছয় মাসের মধ্যে দুই বার দাম বাড়ানো যাবে না। এখানে বিইআরসির বক্তব্য ছিল তারা মূল্য বৃদ্ধি করেছে, কিন্তু দুইটি স্তরে। হাইকোর্ট সেটাকে আমলে না নিয়ে অবৈধ বলেছে। ইতোমধ্যে ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। আবার শুনানির মাধ্যমে আবার হয়তো মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগ গ্যাস কোম্পানিগুলো নিতে পারে এবং বিইআরসি সেটা বিবেচনা করতে পারে।”
দুই দফায় দামবৃদ্ধি
আবাসিক খাতের গ্রাহকদের জন্য গ্যাসের দাম প্রথম দফায় বাড়ানো হয় পয়লা মার্চ থেকে।
এক চুলার জন্য সাড়ে সাতশো এবং দুই চুলার জন্য আটশো টাকা করা হয়।
এরপর তিনমাসের মধ্যেই দ্বিতীয় দফায় দাম বাড়ানো হয় দেড়শ টাকা করে।
বাংলাদেশের সরকারের অবস্থান হল- ধীরে ধীরে পাইপলাইনে গৃহস্থালি কাজের জন্য গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে শিল্প বা বাণিজ্যিক খাতে তা বাড়ানো।
বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বাসাবাড়ির গ্যাস এলপিজির মাধ্যমে হবে। আর ৭০ শতাংশ মানুষ এলপিজি গ্যাস ব্যবহার করছে সিলিন্ডারের মাধ্যমে। দেশের ৬/৭ শতাংশ মানুষ পাইপলাইনে গ্যাসের সুবিধা পাচ্ছে। অল্পকিছু মানুষের সুবিধার চেয়ে বৃহৎ পরিসরে সুবিধার কথা ভাবছে সরকার।
তিনি বলেন, দাম নির্ধারণের দায়িত্ব বিইআরসির হাতে। প্রতিবছরই এটা বাড়তে দেয়া হয় এটা তাদের ব্যাপার।
মি. হামিদ জানান, দেশে ৩৫ লাখের মত গৃহস্থালি ও বাণিজ্যিক সংযোগ আছে পাইপলাইনে। আর শিল্প কারখানায় লাখ-খানেক। তবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা।
অধ্যাপক ম তামিম বলছেন, এতদিন রাজনৈতিক কারণে গ্যাসের দাম বাড়াতে পদক্ষেপ নেয়নি অতীতের সরকারগুলি। এবার সময় এসেছে প্রাকৃতিক এই সম্পদের দাম বাড়ানোর।
অধ্যাপক তামিম বলেন, ট্রানজিশন পিরিয়ডে সবাইকেই সাফার করতে হবে। যেকোনো পণ্য বা সেবা যতখানি ব্যবহার করবে ভোক্তা তো তারই মূল্য দেবে-সেটাই হওয়া উচিত। আর সেটা করতে হলে প্রতিটি বাড়িতে গ্যাস মিটার বসিয়ে দেয়া যায় তাহলে মানুষ নিশ্চিতভাবে গ্যাস ব্যবহার করতে পারবে।”
শিল্পখাতের জন্য আমদানি করা তরলীকৃত গ্যাস যা এলএনজি নামে পরিচিত গ্যাস সরবরাহের ওপর জোর দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
এজন্য কাতার, কুয়েত ওমানসহ বিভিন্ন দেশের সাথে কথাবার্তা চলছে।
আর ২০১৮ সাল নাগাদ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা।