মেজর অবঃ জিয়াউদ্দিন মারা গেছেন।

Date:

Share post:

মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার ও দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের চেয়ারম্যান পিরোজপুরের সন্তান মেজর (অবঃ) জিয়াউদ্দিন আহমেদ আর নেই। শুক্র (২৮ জুলাই) সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মেজর (অবঃ) জিয়াউদ্দিনের ভাগ্নে শাহানুর রহমান শামীম এই তথ্য বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন।

গত ১ জুলাই মেজর জিয়াউদ্দিন অসুস্থ হলে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে জানান, তার দুটি কিডনি অচল ও লিভারের অবস্থা খারাপ। জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে তাকে এয়ার এম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়। তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৬৭ বছর।

সুন্দরবনের ‘মুকুটহীন সম্রাট’নামে খ্যাত জিয়াউদ্দিন আহমেদ পিরোজপুর শহরের শহীদ ফজলুল হক সড়কের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্্রহণ করেন। তার বাবা অ্যাডভোকেট তাব উদ্দীন আহমেদ পিরোজপুর র চেয়ারম্যান ছিলেন।

বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী জিয়াউদ্দিন আহমেদ ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন এবং সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে যোগদান করেন। তিনি ১৯৭১ সালে সেনাবাহিনীর মেজর হিসেবে পশ্চিম পাকিস্থানে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জুলাই মাসে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে যোগ দেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। দায়িত্ব পান ৯ ্বর সেক্টরের সুন্দরবন অঞ্চলের সাব সেক্টর কমান্ডার হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধে সুন্দরবন অঞ্চলে শত্রুদমনে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য তাকে ‘মুকুটহীন সম্রাট’ উপাধী দেওয়া হয়। দেশ স্বাধীন হ পর তিনি ব্যারাকে ফিরে যান।

পরে মেজর হিসেবে পদ পান। ‘৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু যখন সপরিবারে নিহত হন তখন তিনি ঢাকায় ডিজিএফআইতে কর্মরত ছিলেন। ৭ নভেম্বর কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে সিপাহি- জনতার বিপ্লবে তিনি অংশ নেন। এরপর সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে কর্নেল তাহেরের সৈনিক সংস্থার পক্ষে অবস্থান নিয়ে তার অনুসারীদের নিয়ে সুন্দরবনে আশ্রয় নেন। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে সুন্দরবনে সেনা অভিযানে মেজর জিয়াউদ্দিন গ্রেফতার হন। সামরিক আদালতে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি ও আ স ম আবদুর রব, মেজর জলিলসহ অন্যদের সঙ্গে মেজর জিয়াউদ্দিনকেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ নিয়ে তখন সারাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা আন্দোলন শুরু করলে আ স ম আবদুর রব, মেজর জলিলসহ অন্যদের সঙ্গে মেজর জিয়াউদ্দিনও ১৯৮০ সালে রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি লাভ করেন। ১৯৮৩ সালে জেনারেল এরশাদের সময় মেজর জিয়াউদ্দিন দেশ ছেড়ে আশ্রয় নেন সিঙ্গাপুরে।

এরপর ১৯৮৪ সালের অক্টোবরে ছোটভাই কামালউদ্দিন আহমেদ, ভাগ্নে শাহানুর রহমান শামীম ও কয়েককজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে চলে যান সুন্দরবনের দুবলার চরে। বনদস্যু বাহিনীগুলোর হাতে প্রতিনিয়ত নির্যাতিত সুন্দরবনের জেলেদের সংগঠিত করে শুরু করেন শুঁটকি মাছের ব্যবসা।

১৯৮৯ সালে জিয়াউদ্দিন পিরোজপুর পৌরসভার চেয়ারারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর গড়ে তুলেন ‘সুন্দরবন বাঁচাও’ কর্মসূচি নামে একটি অিক সংগঠন। ুর আগ পর্যন্ত তিনি দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কখনও জেলেদের নিয়ে, কখনও প্রশাসনকে সহায়তা দিয়ে ডাকাতদের নির্ে অবদান রেখেছেন তিনি। এ কারণে সুন্দরবনের একাধিক ডাকাত গ্রুপ বিভিন্ন সময়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এসব ডাকাত গ্রুপ জিয়াউদ্দিনকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। তিনি একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছেন।

সর্বশেষ মোর্তজা বাহিনীর সদস্যরা পূর্ব সুন্দরবনের হারবাড়ীয়া ও মেহেরালীর চর এলাকার মাঝামাঝি চরপুঁটিয়ায় মেজর জিয়াকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। বন্দুকযুদ্ধে মোর্তজা বাহিনীর চার সদস্য নিহত ও মেজর জিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন।

মেজর জিয়া মুক্তিযুদ্ধে নিজের ও অন্যদের অংশগ্রহণ এবং যুদ্ধের বিভিন্ন দিক নিয়ে ‘সুন্দরবন সমরে ও সুষমায়’ নামে একটি বই লিখেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

অসুস্থ মাকে দেখতে স্কয়ার হাসপাতালে ডা. জোবাইদা রহমান

১৭ বছর পর ঢাকায় ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান। মঙ্গলবার (৬ মে) সকালে...

বিদ্রোহীদের বাদ দিয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে ৯ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৪৩ জনকে...

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় দাসের জামিন স্থগিত

জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে দেওয়া...

স্বনামধন্য নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

স্বনামধন্য নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। আজ (৬ মে) ঢাকার সপ্তম যুগ্ম মহানগর দায়রা...