বাংলাদেশে বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা, চ্যালেঞ্জ কোথায়?

Date:

Share post:

ঢাকার খুব কাছের একটি গ্রাম রূপগঞ্জের পিরুলিয়া। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের এই গ্রামের আশপাশের সবখানে বিদ্যুৎ এলেও পিরুলিয়ার মানুষ বিদ্যুতহীন।

শুধু এ গ্রামটিই নয় সরকারি হিসেবেই বাংলাদেশের ৩০ ভাগ মানুষ এখনো গ্রিড বিদ্যুতের সুবিধা পায় না। আর ২০ ভাগ মানুষ সম্পূর্ণ অন্ধকারে।

বিদ্যুৎ খাতে নাজুক অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৮২টি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হয়েছে। গত ৮ বছরে নতুন সংযোগ দেয়া হয়েছে প্রায় দেড় কোটি।

এসব তথ্য দিয়ে গত কয়েক বছরে বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে বলেই সরকার প্রচার করছে। যদিও শহরে বা গ্রামে-গঞ্জে যারা বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছেন গ্রীষ্মের মরশুমে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের অভিযোগ করে থাকেন।

কয়েকদফায় বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির সমালোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা – ২০৪১

বিদ্যুৎ খাতে সমস্যা সমাধানে বর্তমান সরকার স্বল্প মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করেছে। এছাড়া ২০৪১ সাল পর্যন্ত ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে।

কিন্তু কিছু বাম রাজনীতিক দল ও সংগঠন বরাবরই সরকারের বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা ও নীতির বিরোধিতা করে আসছে। সম্প্রতি ২০৪১ সালকে সামনে রেখে তারা ভিন্ন একটি রূপরেখা দিয়েছে।

তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ-বিদ্যুৎ ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি নামের সংগঠনটি তাদের খসড়া রূপরেখায় নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনকেই প্রাধান্য দিয়েছে।

জাতীয় কমিটির রূপরেখায় ২০৪১ সালের মধ্যে ৯১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে যেখানে ৫৫ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে নবায়নযোগ্য (সৌর ৪২%, বায়ু ৭%, বর্জ্য ৫%) জ্বালানিতে। এছাড়া ৪ শতাংশ হবে তেল ভিত্তিক এবং ৪ শতাংশ বিদ্যুৎ আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে ও উৎপাদন ক্ষমতার ৩৭ শতাংশ হবে গ্যাসভিত্তিক।আনু মুহাম্মদ, জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা প্যানেলের সমন্বয়কারী

জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা প্যানেলের সমন্বয়কারী আনু মুহাম্মদ দাবি করেন, সরকারের যে মহাপরিকল্পনা তার থেকে অনেক বেশি লাভজনক এবং টেঁকসই হবে তাদের পরিকল্পনা।

“সারা পৃথিবীতে ফসিল ফুয়েল তো একটা সময় শেষ হবেই। আমাদের এই প্রস্তুতিটা যদি না থাকে তাহলে আমরা কিন্তু তখনো আবার মুশকিলে পড়বো। তখনো দেখা যাবে যে বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে আমাদের সূর্যের আলো কিনতে হবে। এই যে বিশ্বব্যাপী গতিটা তার কাছাকাছি তো আমরা যেতে পারবো না। তার সাথে আমাদের গ্যাস ও আমাদের নবায়নযোগ্য যে অনেকগুলো উপায় আছে সেগুলোর কম্বিনেশন করেই আমরা এই প্ল্যানটা করেছি।”

জাতীয় কমিটির এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বলা হয়েছে মোট বিনিয়োগ লাগবে ১১০ বিলিয়ন ডলার। আর তাদের দাবি বিদ্যুতের দামও থাকবে ইউনিট প্রতি ৫টাকা ১০ পয়সা। এ পরিকল্পনা সম্পর্কে বুয়েটের অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, তারা যে পরিকল্পনাটা দিয়েছে এটা যদি হতে পারে আমার চেয়ে খুশী আর কেউ হবে না।

“এটা হবে সবচেয়ে আদর্শ ও কাঙ্ক্ষিত সমাধান। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই। কিন্তু বাস্তবে কি এটা সম্ভব কিনা এটা হচ্ছে দেখার বিষয়। বাস্তবে যদি আমরা দেখি সরকার এ পর্যন্ত ১৫-১৬টা সৌর বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে। তার একটিও দৃশ্যমান হয়নি এখনো।”মি. তামিম বলেন, চীন, ভারত কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করলে চলবে না। এখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে একসঙ্গে বিরাট এলাকা জুড়ে জমির সংস্থান।

সরকার ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোনো কৃষিজমিতে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা যাবে না।

“একশো মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তিনশো একর জমি দরকার। তাদের পরিকল্পনায় ২০৪১ সালের মধ্যে ৪২ শতাংশ বা প্রায় ৪০ হাজার মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে এত জমি কোথায় পাবে? তার মতে এ পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত বলে মনে হয় না।”

অন্যদিকে সরকারের বিদ্যুৎ খাতে ২০১৬ সালের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। যেখানে আমদানি ও নিজস্ব গ্যাসে ৩৫ শতাংশ, আমদানি নির্ভর কয়লায় ৩৫ শতাংশ, তেল, বিদ্যুৎ আমদানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বাকি ৩০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন মানসম্মত বিদ্যুতের জন্য ২০২২ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে।

সরকারের মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিয়ে অধ্যাপক তামিম বলেন, অনেক কিছু সমন্বয় করেই এ মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে কিন্তু সরকার এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে অগ্রসর হতে পারছে না।

এদিকে মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র না আসায় রেন্টালের আদলে আবারো ৩,০০০ মেগাওয়াট তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

বিশেষ আইনে এরকম উদ্যোগ আর উৎপাদনের সঙ্গে সঞ্চালন ও বিতরণে সংকট নিয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিদ্যুৎ খাতে জরুরি অবস্থা এখনো আছে এবং আরো থাকবে। বিদ্যুৎ খাতে কয়লা ভিত্তিক বড় কেন্দ্র নির্মাণ পিছিয়ে গেছে এটা সত্য মন্তব্য করে তিনি বলেন, মানসম্মত বিদ্যুতের জন্য ২০২২ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে।জাতীয় কমিটির বিদ্যুৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা তাদের একটা প্রতিবেদন। এটা বাস্তবসম্মত বলে তিনি মনে করেন না।

“আমরা বলছি ৪১ সালে ১২ টাকায় বিদ্যুৎ দিব তারা ৫ টাকার কথা বলছে। আমি মনে করি তাদের এগিয়ে আসা দরকার। তাদের যদি কোনো প্রকল্প থাকে সোলারের এক দুই হাজার মেগাওয়াটের আমি অনুমোদন দিয়ে দেব। দেখা যাক তারা দিতে পারে কিনা!”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আবারো এস আলমে আগুন 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনির গুদামের পর এবার তেলের মিলে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের...

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...