সিএমপির কমিশনারের বিরুদ্ধে বদলি নিয়ে বিতর্কিত।

Date:

Share post:

ওসি বদলের ক্ষেত্রে আইজিপির নির্দেশনা মানছে না চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। পোস্টিং বা নিয়োগ পাওয়ার ন্যূনতম ১৮ মাসের মধ্যে গুরুতর কোনো অপরাধ বা অভিযোগ ছাড়া তুচ্ছ কারণে কোনো ওসিকে বদলি না করার যে পরিপত্র জারি করা হয়েছে তাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার। দেড় বছর তো দূরের কথা নিয়োগ দেয়ার ৬ মাসের মাথায়ও ওসিদের বদলি করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে হচ্ছে এই বদলি। একেকটি বদলির ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা ‘আন্ডারহ্যান্ড ডিলিং’ হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বদলি হওয়া বা পোস্টিং পাওয়া ওসি কোন দল বা মতের সেসব বিষয়ও বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না। বিএনপি কিংবা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এমন ওসিরাও নির্বিঘেœ পোস্টিং পাচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে, অর্থের বিনিময়ে বদলি বাণিজ্যের এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিএনপি-জামায়াতপন্থীরাও গেড়ে বসতে চায় সিএমপিতে।

চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা যেসব ওসি বা পরিদর্শক সিএমপিতে রয়েছেন তারাও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিপুল টাকা ব্যয় করে পছন্দের থানায় গেলেও সেই থানায় ন্যূনতম দেড় বছর থাকা যাবে কিনা তারও নিশ্চয়তা নেই। খরচ করা টাকা লাভসহ তুলতে পোস্টিং পাওয়া অসাধু ওসিরা অবৈধ পন্থা অবলম্বন করেন। এতে করে পুলিশের যে সেবা নাগরিকদের পাওয়ার কথা সেই সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব বিষয় নিয়ে সিএমপির সাধারণ পুলিশ কর্মকতাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। চট্টগ্রামের ইপিজেড ও আকবর শাহ থানা ছাড়া বাকি ১৪ থানার ওসি (তদন্ত) বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের (২০০৫ ব্যাচ) ‘রিক্রুট’ করা বলেও সূত্র জানিয়েছে।

গত বছরের ২৭ অক্টোবর আইজিপি একেএম শহীদুল হক একটি পরিপত্র (নম্বর জিএ/৪-২০১৬/৩১৩৩) জারি করেন। ওই সার্কুলারে বলা হয়, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, অহেতুক ও তুচ্ছ কারণে থানার অফিসার ইনচার্জদের বদলি, প্রত্যাহার বা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হচ্ছে। আবার অনেকের মধ্যে সন্তোষজনক চাকরিকাল পূর্ণ হওয়ার পর বদলি হলেও ওই আদেশ বাতিল বা পরিবর্তন করারও প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা কাক্সিক্ষত নয়। এমতাবস্থায় থানার অফিসার ইনচার্জদের বদলি, সংযুক্তি বা প্রত্যাহার সংক্রান্ত যে নির্দেশাবলী পালনের কথা বলা হয় তা হচ্ছে- সার্ভিসেস অ্যান্ড জেনারেল এডমিনিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্ট অর্ডার ১৯৬৮-এর অনুচ্ছেদ ১০ (১)-এর মর্মার্থ অনুসারে এবং বাস্তবতা পর্যালোচনায় কোনো তুচ্ছ কারণে যোগদানের তারিখ থেকে অন্যূন ১৮ মাস আগে কোনো অফিসার ইনচার্জকে বদলি, প্রত্যাহার বা অন্যত্র সংযুক্ত করা যাবে না। এর আগে কোনো ওসিকে বদলি করতে হলে তার কারণ প্রদর্শনপূর্বক বিস্তারিত বিবরণ আইজিপি বরাবরে পাঠাতে হবে। বদলির আদেশ জারির আগে জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। তুচ্ছ কারণ পরিহার করতে হবে।

কিন্তু দেখা গেছে, সিএমপির বিভিন্ন থানায় ওসি বদলের ক্ষেত্রে আইজিপির এই নির্দেশনা প্রতিপালিত হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিএমপির ইপিজেড থানা, পতেঙ্গা থানা, বাকলিয়া থানা, চান্দগাঁও থানা, চকবাজার থানা, বন্দর থানা, আকবর শাহ থানার ওসি পদে গত দেড় বছরে কয়েক দফায় রদবদল হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী ও বগুড়া থেকেও সিএমপি কমিশনারের ‘নিজস্ব লোক’ হিসেবে পরিচিত একাধিক অফিসারকে বদলি করে সিএমপিতে আনা হয়েছে। ইপিজেড থানার ওসি আবুল কালাম আজাদকে যোগদানের ৬ মাসের মাথায় বদলি করা হয়েছে। একইভাবে এই থানা থেকে ৮ মাসের মাথায় বদলি করা হয় আবুল বাশারকে। এ থানায় সর্বশেষ ওসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আহসানুল ইসলাম। অর্থাৎ দেড় বছরেরও কম সময়ে এই থানাই তিনজন ওসি রদবদল হয়। আহসানুল ইসলাম বিএনপি সমর্থিত বলে অভিযোগ অনেক পুলিশ কর্মকর্তার।

বন্দর থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিমকে বদলি করা হয় ডবলমুরিং থানায়। বন্দর থানায় বদলি করে আনা হয় মইনুল ইসলামকে। চকবাজার থানার ওসি আজিজ আহমেদকে বদলি করে সেখানে দেয়া হয় মোহাম্মদ নুরুল হুদাকে। আজিজ আহমেদ এক বছরের সামান্য বেশি চাকরি করেন চকবাজার থানায়। চান্দগাঁও থানায় ৬ মাসের মাথায় দু’জন ওসি রদবদল হয়েছেন। একেএম শাহজাহান কবিরকে বদলি করে সেখানে আনা হয় সাইফুল ইসলামকে। ৬ মাসেরও কম সময়ে সর্বশেষ রোববার এই থানার ওসি সাইফুল ইসলামকে বদলি করে সেখানে নিয়োগ দেয়া হয় সিটি এসবির পরিদর্শক নেজাম উদ্দিনকে। তবে বুধবার পর্যন্ত তিনি যোগদান করেননি। অপেক্ষাকৃত জুনিয়র এই পুলিশ পরিদর্শক মহসিন কলেজে পড়া অবস্থায় শিবিরের সাথী পর্যায়ের নেতা ছিলেন বলে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা ও তার সহপাঠী অভিযোগ করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বদলি হওয়া একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, কী কারণে কম সময়ে বদলি হয়েছেন তা তারা নিজেরাই জানেন না। তাদের কোনো কারণ দর্শানো হয়নি। তারা এও অভিযোগ করেন, কোতোয়ালি, কর্ণফুলী এবং বায়েজিদ বোস্তামী থানাসহ বেশ কয়েকটি থানা রয়েছে যেখানে আড়াই বছর থেকে সাড়ে তিন বছর পর্যন্ত ওসিরা কর্মরত আছেন। এছাড়া চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা অনেক পুলিশ পরিদর্শকও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। চট্টগ্রামের বাসিন্দা এবং সনাতন সম্প্রদায়ের পরিদর্শক পদমর্যাদার ২৩-২৪ জন অফিসারের মধ্যে অন্তত ২০ জনই বদলি হয়েছেন। তাদের কাউকে সিএমপির বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আবার কাউকে সংযুক্ত ও বদলি করা হয়েছে পুলিশ লাইন কিংবা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়।

পুলিশ কমিশনারের বক্তব্য :ওসি বদলের ক্ষেত্রে আইজিপির জারি করা পরিপত্র না মানা প্রসঙ্গে সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার বুধবার দুপুরে যুগান্তরকে বলেন, আইজিপির জারি করা পরিপত্র না মানার কোনো প্রশ্নই আসে না। জারি করা সার্কুলার বা পরিপত্রে যা বলা আছে দেড় বছরের আগে ওসিদের বদলি করা যাবে না; এর মানে এই নয় যে, এটা মানতেই হবে। প্রশাসন চালাতে গেলে অনেক কিছু এডজাস্ট করে চলতে হয়। যথাস্থানে কথা বলেই ওসিদের বদলি করা হয়। এসব বদলির ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের অর্থনৈতিক লেনদেন বা আন্ডারহ্যান্ড ডিলিং হচ্ছে- এমন অভিযোগ যারা করছেন তার সত্য-মিথ্যা সম্পর্কে তারাই ভালো বলতে পারবেন।
সুত্রঃযুগান্তর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আবারো এস আলমে আগুন 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনির গুদামের পর এবার তেলের মিলে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের...

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...