বীরকন্যা প্রীতিলতার ১১০ তম জন্মদিন আজ

Date:

Share post:

নিজস্ব প্রিবেদক : ‘মাগো, অম করে কেঁদোনা! আমি যে সত্যের জন্য, স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতে এসেছি, তুমি কি তাতে আনন্দ পাও না? কী করব মা?…তুমি কি সবই নীরবে সহ্য করবে মা? একটি সন্তানকেও কি তুমি মুক্তির জন্য উৎসর্গ করতে পারবে না? তুমি কি কেবলই কাঁদবে?’

িটা মৃত্যুর আগের রাতে মাকে লেখা বীরকন্যা প্রীতিলতার। যিনি ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিকন্যা।

ডাকনাম- রাণী, ছদ্মনাম ফুলতার, রো নাম প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।

১৯১১ সালের ৫ মে পটিয়ার ধলঘাট ইউনিয়নের দক্ষিণ সমূরা ে জন্মগ্রহণ করেন প্রীতিলতা। বাবার নাম জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার এবং মা প্রতিভা দেবী। মিউনিসিপ্যাল অফিসের হেড কেরানী ছিলেন জগদ্বন্ধু। শহরের আসকার খানের দীঘির দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়ে টিনের ছাউনি দেওয়া মাটির একটা দোতলা বাড়িতে স্থায়ীভাবে থাকতেন ওয়াদ্দেদার পরিবার।

১৯২৮ সালে ড. খাস্তগীর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে লেটার মার্ক পেয়ে ম্যাট্রিক পাশ করেন প্রীতিলতা। পরবর্তীতে আইএ পড়ার জন্য ঢাকার ইডেন কলেজে ভর্তি হন। ১৯৩০ সালে আইএ পরীক্ষায় তিনি সম্মিলিতভাবে ৫ম ও মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান লাভ করেন। পরবর্তীতে কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে ১৯৩২ সালে ডিস্টিংশনসহ বিএ পাশ করেন। চট্টগ্রামে ফিরে নন্দনকানন অর্পণাচরণ ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে প্রীতিলতা ও তার বান্ধবী বীণা দাশগুপ্তের ফলাফল স্থগিত রাখা হয়। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ২২ মার্চ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তাদের দুজনকে মরণোত্তর স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ব্রিটিশদের হাত থেকে দেশকে স্বাধীন করার জন্য মাস্টার দা সূর্য সেনের নির্দেশে নিয়েছিলেন সশস্ত্র প্রশিক্ষণ। ১৯৩২ সালের সেপ্ম্বর মাসে প্রীতিলতা ও তার সহযোদ্ধারা নগরের পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাব দখলের ব্রিটিশ পুলিশ তাদের চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে। গ্রেফতার এড়াতে প্রীতিলতা পটাশিয়াম সায়ানাইড পান করে আত্মাহুতি দেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ২১ বছর। আত্মাহুতির স্থানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ২০১২ সালের ২ অক্টোবর প্রীতিলতার ব্রোঞ্জমূর্তি স্থাপন করা হয়।
পটিয়ার ধলঘাট গ্রামে সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয়েছে প্রীতিলতা সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স। সুদৃশ্য কমপ্লেক্সের নে আছে বীরকন্যা প্রীতিলতার আবক্ষ ভাস্কর্য। সব কিছুর মূলে বীরকন্যা প্রীতিলতা ট্রাস্ট। এ ট্রাস্টের দাবির মু সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রীতিলতা সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স ভবনটি তৈরি করেছে।
২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর বীরকন্যা প্রীতিলতা সাংস্কৃতিক ভবন উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। ২০০৫ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিের অধ্যাপক প্রণব মিত্র চৌধুরীর তৈরি করা প্রীতিলতার আবক্ষ ভাস্কর্য উন্মোচন করেন বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী। তিনি ট্রাস্ট ভবনেরও ভিত্তি স্থাপন করেন। এ ছাড়া বীরকন্যা স্মৃতি কমপ্লেক্সের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন ডা. দীপুমণি।

দেশ মাতৃকার জন্য আত্মাহুতি দেওয়া এই বীরকন্যা নারীদেরকে অনুপ্রাণিত ও উজ্জীবিত করেছিলেন অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধে নামতে। ১১০তম জন্মদিনে তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
এসএএস/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আসামি রবিনের স্বীকারোক্তি, টিটন ৫ দিনের রিমান্ডে

রাজধানীর পুরান ঢাকায় মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় করা অস্ত্র মামলায় তারেক...

মহানগর যুবদল নেতা এমদাদুল হক বাদশাকে দল থেকে ব-হিষ্কার

মহানগর যুবদল নেতা এমদাদুল হক বাদশাকে দল থেকে ব-হিষ্কার দখলবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির...

১২ দিনের যুদ্ধে ৫০০ ইসরায়েলি নিহত

ইরানের পার্লামেন্ট স্পিকার মোহাম্মদ বাকের কালিবাফ দাবি করেছেন, ১২ দিনের যুদ্ধে ইরানের হামলায় ইসরায়েলের হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা সরকারিভাবে...

মিটফোর্ডে হত্যার বিচার হবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে: আসিফ নজরুল

দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মিটফোর্ডের হত্যার বিচার হবে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। শনিবার (১২ জুলাই) সকাল ১০টায় নিজের...