বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের শ্রেণি কক্ষে ছাত্রলীগ কর্মী খালেদ আহমদ লিটু নিজ গ্রুপের ৭ ছাত্রলীগ নেতার কারো গুলিতে নিহত হন বলে পুলিশ প্রমাণ পেয়েছে।
সোমবার নবাগত শিক্ষার্থীদের দেখাতে একটি রিভলবার ও একটি পাইপগান কলেজে নিয়ে আসেন ছাত্রলীগ নেতা ফাহাদ আহমদ। এ সময় কক্ষে থাকা লিটু হত্যার সাত আসামী অস্ত্রগুলো নাড়াচড়া করে দেখেন। লিটু একটি বেঞ্চে বসে মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।
অস্ত্র দুটি সঙ্গীদের কাছে দিয়ে ফাহাদ দরজার দিকে গেলে অন্যদের যেকোন একজনের হাতে থাকা অস্ত্র থেকে গুলি বের হওয়ায় লিটু নিহত হন। এতে আতংকিত হয়ে শ্রেণিকক্ষে থাকা ছাত্রলীগ নেতারা পালিয়ে যান।
সোমবার রাতে লিটুর বাবা খলিলুর রহমান বাদী হয়ে ছাত্রলীগ নেতা পাভেলের গ্রুপের সাত নেতাকর্মীকে আসামী করে মামলা করেন। পুলিশের হাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক পৌরসভার ফতেহপুর গ্রামের ফাহাদ আহমদ, কামরান আহমদ, খাসা গ্রামের এমদাদুর রহমান ও দাসগ্রামের দেলোয়ার হোসেন মিন্টুকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
এছাড়া মামলার আসামী দাসগ্রামের শিপু ,ফতেহপুর গ্রামের কাওছার এবং নয়াগ্রামের সাহেদ আহমদ পলাতক। পুলিশ মঙ্গলবার গ্রেফতার চার ছাত্রলীগ নেতাকে আসামী দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।
সোমাবার রাতে অভিযান চালিয়ে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ কলেজ রোডের একটি দোকানের বারান্দায় থাকা মাচার নিচ থেকে রিবলবার উদ্ধার করে। একই রাতে পুলিশের পৃথক অভিযানে নয়াগ্রাম এলাকার সাহেদের বাড়ি থেকে দুইটি রামদা উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে বিয়ানীবাজার থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, যে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে- গুলিটি সে অস্ত্রের কি না তা বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে অবহিত হবেন। ময়না তদন্তে লিটু মাথায় পেছনের দিকের ক্ষতস্থানে একটি গুলি পাওয়া যায়। গুলিটি জব্দ করে থানায় নিয়ে আসার জন্য পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটি কক্ষের ভেতরে লিটুর সাথে আসামী ৭জনই উপস্থিত ছিল। তাদের উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে। আসামীদের রিমান্ডের আবেদন করা হবে। সোমবার রাতে গ্রেফতার আসামীদের পৃথকভাবে বিয়ানীবাজার থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পুলিশকে ফাহাদ জানায়, তাদের গ্রুপের নবাগত শিক্ষার্থীদের একটি অংশকে দেখাতে সে রিবলবার ও পাইপ গান নিয়ে আসে। তবে কার হাতের অস্ত্র থেকে গুলি বের হয়েছে সে কথা ফাহাদ পুলিশকে জানায়নি। গ্রেফতারকৃত অন্য তিন আসামী কামরান, এমদাদ ও দেলোয়ার পুলিশকে একই তথ্য দিলেও কারগুলিতে লিটু খুন হয়েছেন সে তথ্য তারা চেপে যায়।
ওসি আরও বলেন, আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা নিশ্চিত কক্ষের ভেতরের কেউ উদ্দেশ্যে করে হোক আর অনিচ্ছায় হোক গুলি করলে লিটুর ডান চোখের উপরে লাগে।
এদিকে সোমবার রাত ১০ টায় পৌরসভার কসবা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে লিটুর জানাযার নামাজ শেষে রাতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়েছে। সিলেটে ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে রাত সাড়ে ৭টার দিকে লিটুর মরদেহ বাড়িতে আনা হয়।
এসময় হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয। লিটুর বাবা-মা ও বোনসহ পুরো এলাকার মানুষ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
লিটু বাবা খলিলুর রহমান বলেন, ‘ছেলের জন্য মোটর সাইকেল কিনতে সোমবার ব্যাংকে একটি এফডিআর ভাঙতে যাই। সেখানেই ছেলে নিহত হওয়ার খবর শুনি। ছেলের পাখি পোষার শখ ছিল। হাজার টাকা খরচ করে পাখি পোষেছে। পাখির জন্য আলাদা ঘর বানিয়ে দিয়েছেন। আজ তার প্রিয় মিটু (টিয়া) মারা গেছে। লিটু নিজের নামের সাথে মিল রেখে টিয়াটির নাম মিটু রেখেছিলো। লিটুকে দেখলেই মিটু ভাইয়া বলে শব্দ করত। আজ সেও লিটরু কাছে চলে গেলো । ‘ এসব বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।