এবার বন্দর নগরীতে র্যাবের হাতে ধরা পড়েছে নতুন ধরনের মাদক ‘ক্রিস্টাল আইস’ (ক্রিস্টাল মেথ)। চট্টগ্রামে প্রথমবারের মত ধরা পড়া এ মাদকটি ইয়াবা থেকেও ৪০-৫০ গুণ বেশি নেশা তৈরি করতে সক্ষম বলে দাবি র্যাবের।
বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর খুলশী থানার মোজ্জাফর নগর বাইলেন থেকে নতুন ধরনের এ মাদক উদ্ধার করেছে র্যাব-৭। এসময় র্যাবের হাতে ধরা পড়ে শফিউল আজম (৩৪) ও মো. ইয়াসিন রানা (৫০)।
এদের মধ্যে শফিউল বাঁশখালী থানার মোজ্জাফর আহমদের ছেলে এবং ইয়াসিন রানা কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট থানার মৃত আবুল কালামের ছেলে। তারা দুজনই দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম নগরীতে ‘ক্রিস্টাল আইস’ নামের নতুন মাদকটি বেচাকেনা করে আসছিল বলে জানিয়েছে র্যাব। মূলত বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) নতুন ধরনের এ মাদকটি চট্টগ্রামে উদ্ধারের তথ্য প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায় র্যাব। যদিও রাজধানী ঢাকায় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম বারের মত ধরা পড়েছিল এ মাদকটি।
তবে র্যাবের কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামে এ ধরনের মাদকের উৎস কি তা এখনও পর্যন্ত তা জানার চেষ্টা করছেন তারা। নিখুঁতভাবে এর উৎস ও বিস্তার সম্পর্কে বলতে হলে আরও ‘ইনভেসটিগেশন’ (তদন্ত) প্রয়োজন বলে মন্তব্য র্যাব কর্মকর্তাদের। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং মালেশিয়াসহ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এ ধরনের মাদকের বিস্তার বেশি। আফ্রিকার দেশগুলোতেও এ মাদকের ব্যবহার রয়েছে। সেই হিসেবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে থাইল্যান্ড, মালেশিয়া ও মিয়ানমার হয়ে সমুদ্রপথে ঢুকছে ‘ক্রিস্টাল আইস’।
র্যাব কর্মকর্তা মেজর মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘ডেফিনেটলি এ মাদকটি বাইরে থেকে এসেছে। এটা কোথা থেকে এসেছে সেটা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’ র্যাবের হাতে ধরা পড়া নতুন এ মাদকটি মাত্র ১৪০ গ্রামের যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১৪ লাখ টাকা বলে জানান তিনি।
নতুন এ ধরনের মাদকটি নিয়ে সম্পূর্ণ ধারণা দিতে না পারলেও অন্তত বাংলাদেশ কিংবা চট্টগ্রামে এ ধরনের মাদকের উৎপাদন নেই বলে জানান মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক মো. মুজিবুর রহমান। তিনি জানান, ‘একটি ইয়াবা ট্যাবলেটে থাকে ২৫ মিলিগ্রাম মিথাইল এমফিটামিন, ক্যাফেইন অন্যান্য উপাদান।’ কিন্তু ‘ক্রিস্টাল আইস’ পুরোটাই মিথাইল এমফিটামিন বলে র্যাবের বরাতে জানান তিনি। যার পুরোটাই ক্রিস্টাল বা চিনির মতো দানাদার হওয়ার কারণে এ মাদকটি ক্রিস্টাল আইস কিংবা ক্রিস্টাল ম্যাথ নামে স্থানীয়ভাবে পরিচিত বলে জানান তিনি।
এদিকে ২০১৯ সালে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় দেশে প্রথমবারের মত উদ্ধার করা হয়েছিল নতুন নেশাজাতীয় দ্রব্য ক্রিস্টাল আইস। এসময় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ৩ বাংলাদেশিকে। ওই একই বছর ২৭ শে জুন ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে ক্রিস্টাল মেথ বা মেথামফেটাইমাইনসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছিল নাইজেরীয় এক নাগরিককে। তখন মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলেছে, ‘ইয়াবায় এমফিটামিন থেকে ৫ ভাগ আর ক্রিস্টাল মেথ বা আইসে পুরোটাই এমফিটামিন।’
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক মো. মুজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডে এগুলো পাওয়া যায়। মালেশিয়া বা ইন্দোয়েশিয়ায়ও আছে।’