ডেস্ক নিউজ: জয়নুল আবেদিন বিংশ শতাব্দীর একজন বিখ্যাত বাঙালি চিত্রশিল্পী। আজ এ গুনী শিল্পগুরুর ১০৬ তম শুভ জন্মদিন। ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ জেলার কেন্দুয়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
ছেলেবেলা থেকেই শিল্পকলার প্রতি গভীর আগ্রহ ও অধ্যাবসায় তাকে বিখ্যাত চিত্রশিল্পীতে পরিণত করে। মাত্র ষোল বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে তিনি বন্ধুদের সাথে ভারতের কলকাতায় গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস দেখার জন্য গিয়েছিলেন।
১৯৩৩ সালে মাধ্যমিক (ম্যাট্রিক) পরীক্ষার আগেই স্কুলের পড়ালেখার বাদ দিয়ে তিনি কলকাতায় আর্ট স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৩৮ সালে কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসের ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
চিত্রশিল্পকর্মে উপমহাদেশে বিশেষকরে বাংলাদেশে শিল্পী জয়নুল আবেদিনের অবদান অবিস্মরনীয়। তার উদ্যোগে ১৯৪৮ সালে পুরান ঢাকার জনসন রোডে গভর্নমেন্ট আর্ট ইন্সটিটিউট স্থাপিত হয়। জয়নুল আবেদিন ছিলেন এ প্রতিষ্ঠানের প্রথম শিক্ষক।
১৯৭১-এ বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের পর এ প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বাংলাদেশ চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়’। জয়নুল আবেদিন ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জয়নুল আবেদিনের আগ্রহে ও পরিকল্পনায় সরকার ১৯৭৫-এ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে লোকশিল্প জাদুঘর ও ময়মনসিংহে জয়নুল সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করে।
শিল্পী জয়নুল আবেদিন চিত্রাঙ্কনের চেয়ে চিত্রশিক্ষা প্রসারের ওপর অনেক বেশি সময় ব্যয় করেছেন। অনুমান করা হয় তার চিত্রকর্মের সংখ্যা তিন হাজারের বেশি।
শিল্পগুরু জয়নুল আবেদিন ১৯৪৩ সালের ‘দুর্ভিক্ষ’ চিত্রমালার জন্য বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। এ ছাড়াও তার বিখ্যাত সব শিল্পকর্মগুলো হল: ১৯৫৭-এ নৌকা, ১৯৫৯-এ সংগ্রাম, ১৯৭১-এ বীর মুক্তিযোদ্ধা, ম্যাডোনা প্রভৃতি। তার দীর্ঘ দুটি চিত্রকর্ম ১৯৬৯-এ অংকিত ‘নবান্ন’ এবং ১৯৭৪-এ অংকিত ‘মনপুরা-৭০’ বিশ্বে জননন্দিত দুটি শিল্পকর্ম।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংগৃহীত তার শিল্পকর্মের সংখ্যা ৮০৭টি। বেঙ্গল ফাউন্ডেশানের সংগ্রহে আরো প্রায় পাঁচশত চিত্রকর্ম সংরক্ষিত আছে। তার পরিবারের কাছে এখনো চার শতাধিক চিত্রকর্ম সংরক্ষিত রয়েছে। ময়মনসিংহের সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত চিত্রকর্মের সংখ্যা ৬২টি।
এছাড়াও পাকিস্তানের বিভিন্ন সংগ্রহশালায় তার বিপুল পরিমাণ চিত্রকর্ম সংরক্ষিত আছে। বাংলাদেশে চিত্রশিল্প বিষয়ক শিক্ষার প্রসারে আমৃত্যু প্রচেষ্টার জন্য গুণী এ চিত্রশিল্পী ‘শিল্পাচার্য’ অভিধা লাভ করেন। জয়নুল আবেদীন ১৯৭৬ সালের ২৮ মে ৬২ বছর বয়সে চিরনিদ্রায় শায়িত হন।