কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের সাময়িক বহিষ্কার হওয়া ছয় চিকিৎসকের একজন ডা.শারমিন হোসেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ডা.শারমিন দাবি করেছেন, তিনি রোস্টার অনুযায়ী ডিউটি করে গেছেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে অপারগতাও জানাননি। এমনকি তাকে কেন বরখাস্ত করা হয়েছে সে বিষয়টিও বুঝতে পারছেন না বলে দাবি ডা. শারমিনের।
তবে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ সেহাব উদ্দীন বলেছেন, হাসপাতালে ডিউটি করা আর কোভিড আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেওয়া এক কথা নয়। ডা. সেহাব উদ্দীন বলেন, চার জন হাসপাতালে আসেন না, আর বাকি দুজন হাসপাতালে আসেন কিন্তু কোভিড রোগীদের কাছে যাওয়ার জন্য সাহস পান না।
প্রসঙ্গত, শনিবার (১১ এপ্রিল) কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের ছয় চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাদের মধ্যে চার জনকে হাসপাতালে নিয়মিত না আসার কারণে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বাকি দুজন করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে অনিচ্ছা জানানোয় বরখাস্ত করা হয়েছে। রবিবার সাময়িক বরখাস্ত হওয়া চিকিৎসক ও গাইনি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শারমিন হোসেন একটি বক্তব্য দিয়েছেন ফেসবুকে। তাতে তিনি বলেন, তাকে কেন সাসপেন্ড করা হয়েছে, তিনি তার কিছুই জানেন না।
ফেসবুক ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘ ১ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত নাইট ডিউটি করে পরদিন সকালে বাসায় গিয়েছি, ৯ এপ্রিল পর্যন্ত হাসপাতালের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছিল না। ৯ এপ্রিল আমার হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক আমাকে কোনও ইনফরমেশন বা টেলিফোনে কোনও যোগাযোগ না করে আমার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদফতরে অভিযোগ পাঠান যে, আমি নাকি কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীদের চিকিৎসা দিতে রাজি নই অথবা ইচ্ছুক নই। এমন কথা আমি লিখিত বা মৌখিকভাবে কারও কাছেই প্রকাশ করেছি বলে আমার জানা নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমি ডিউটি করে ফেরার পর একজন তত্ত্বাবধায়ক কীভাবে আমার সম্পর্কে একটা অর্ডার তৈরি করে ডিজি হেলথে (স্বাস্থ্য অধিদফতর) পাঠালেন, আমি নিজেও ভেবে পাচ্ছি না ।’ সাসপেন্ড হওয়ার পরই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেহাব উদ্দীনের কাছে গিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে আমি ডিউটি করতে ভয় পাচ্ছি অথবা আমি ইচ্ছুক না? স্যার বললেন, ‘না না, আমি সরি,….এটা ভুল হয়ে গেছে, আমি ঠিক করে দিচ্ছি।’ আমি তখন একটা দরখাস্ত করার কথা বললাম। তিনি বললেন, ‘সেটাও লাগবে না, আমার একটা ফোনই যথেষ্ট’।”
এরপর তিনি তার রোস্টারের কপি,হাজিরাখাতার কপিসহ স্বাস্থ্য অধিদফতরে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন বলেও জানান ডা. শারমিন। সবশেষে তিনি বলেন, ‘কী করে একটা মানুষ সাসপেন্ড হয়। এটা সুস্থ মাথায় বুঝতে পারছি না, আমাদের সমাজে কী ডাক্তারদের কোনও মূল্য নেই, কোনও সম্মান নেই। এটা কেবল আমার একার কলঙ্ক বলে আমি মনে করি না, এটা পুরো ডাক্তার সমাজের কলঙ্ক, ডাক্তার সমাজকে হেয়প্রতিপন্ন করা।’
এদিকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেহাব উদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উনি কয়েকবার বলেছেন করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে চান না। কেবল আমার কাছে নয়, সবাই জানেন এটা। হাসপাতালে প্রেজেন্ট থাকলেই তো কেবল হবে না, কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার চায় সবার নৈতিক দায়িত্ব জাগ্রত হোক।’ তাহলে কী এই চিকিৎসকদের নৈতিক দায়িত্ব ছিল না প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এখন কোভিড রোগীদের কাছে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়াটা বড় বিষয়। ফেসবুকে অনেকেই অনেক কথা বলবেন।’
ডা. শারমিন যে অভিযোগ করেছেন সেটা মানছেন কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানছি না’। তাহলে তাকে সরি বলেছেন কেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘সরি অবশ্যই বলিনি। তাকে বলেছি স্যারদের সঙ্গে আলাপ করবো, তারা পজিটিভলি দেখবেন।’