চট্টগ্রামের নগরীর লালদীঘি ময়দানে বিকালে ঐতিহাসিক আব্দুল জব্বারের বলী খেলার ১১০তম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কুমিল্লার শাহজালাল বলী। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে লালদীঘির মাঠে তিনি কক্সবাজারের চকরিয়ার তারিকুল আলম জীবন বলীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন। আর এর মধ্যে দিয়ে জীবনের প্রথম শিরোপা জেতেন তিনি। মোট ২৫ জন বলীর মধ্যে প্রতিযোগিতাপূর্ণ খেলা হয়।
প্রায় ৩০ মিনিট ধরে চলা ফাইনালে জীবন ও শাহজালাল এর লড়াই বেশ উত্তেজনা ছড়ায়। এসময় হাজার হাজার দর্শক হাততালি ও শ্লোগানে উল্লাস প্রকাশ করেন। এর আগে বিকেল চারটায় বলীখেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান। টেলিফোনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বলি খেলার স্পন্সর গ্রামীণফোনের চিফ মার্কেটিং অফিসার অ্যান্ড ডেপুটি সিইও ইয়াসির আজমান।
খেলা পরিচালনা করেন ৩০ বছরের অভিজ্ঞ রেফারি সাবেক কাউন্সিলর আবদুল মালেক। তাকে সহযোগিতা করেন নূর মোহাম্মদ লেদু ও জাহাঙ্গীর আলম। শাহজালাল ২০১৮ সালে রানার আপ হয়েছিলেন। সেমি ফাইনালে কুমিল্লার শাহজালালের মুখোমুখি হন মহেশখালীর সাহাবউদ্দিন।
কানায় কানায় পূর্ণ মাঠের আশে পাশের বিভিন্ন ভবনের ছাদে উঠেও মানুষ দেখে ঐতিহ্যবাহী এ বলী খেলা। চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর ১৯০৯ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে এ প্রতিযোগিতার সূচনা করেন। পরে আব্দুল জব্বারের বলীখেলা নামে পরিচিত হয়, যার জনপ্রিয়তা এখনও অক্ষুণ্ণ রয়েছে। বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ১২ বৈশাখে লালদিঘীর ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় এই খেলা। এবার বলীখেলায় চ্যাম্পিয়ন শাহাজালালকে নগদ ২০ হাজার টাকা ও ট্রফি এবং রানারআপ জীবনকে নগদ ১৫ হাজার টাকা ও ট্রফি দেওয়া হয়।
এছাড়া ২৫ বলীকে নগদ ১ হাজার টাকা ও একটি করে ট্রফি দেওয়া হয়। খেলার আগের দিন থেকে শুরু করে পরদিন পর্যন্ত তিনধরে লালদিঘীর মাঠ ও আশেপাশের কয়েক কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বসে বৈশাখী মেলা। বলীখেলার ১১০ তম আসরকে সামনে রেখে এর মধ্যেই পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা দোকানিরা। হাজার হাজার দোকানে বিক্রি হচ্ছে নানান ধরণের জিনিষপত্র।
মেলায় পাওয়া যাচ্ছে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের তৈরি নানা রকমের গৃহস্থলী জিনিষপত্র। বিভিন্ন ধরণের গাছ পাওয়া যাচ্ছে এ মেলায়। পাখি বিক্রেতারা রং-বেরংঙের পাখি বিক্রি করছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য টিয়া, হামিং বার্ড, ময়নাসহ আরও অনেক প্রজাতির পাখি। ঘর সাজাতে ভালোবাসেন যে সব গৃহীনিরা তারা কিনছেন প্রয়োজনীয় নান ধরণের জিনিষ। সবকিছুর একটা বিরাট সমাহার যেন এ মেলায়।
ছেলেদের টি-শার্ট, বডি স্প্রে, শার্ট, মানিব্যাগ, হাতঘড়ি, বেল্ট, সব ধরণের প্যান্ট, জুতা, চশমা, থেকে শুরু করে দৈনন্দিন ব্যবহারের সব রকমের জিনিষ পাওয়া যাচ্ছে এ মেলায়। মেয়েদের জন্য জামা, থ্রী পি, রেডিমটে গয়না, সাজার জন্য কসমেটিকস, কি পাবেন না এ মেলায়। গাছ প্রেমিদের জন্য আছে বিভিন্ন রকমের ফুল, ফল, ঔষধি গাছসহ হরেক প্রজাতির গাছ। হাতের তৈরি বাসা-বাড়ির আসবাবপত্র পাওয়া যাচ্ছে এ মেলায়।
হাজার হাজার মহিলারা তাদের গৃহস্থলী কাজের জন্য কিনছেন প্রয়োজনীয় সামগ্রী। খাদ্য রশিকরা এখানে পাচ্ছেন নানা রকমের খাবার। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিভিন্ন ফলের আচার। মেলায় পাওয়া যাচ্ছে ছোট-বড় সবরকমের মিষ্টি। প্রত্যেকটি দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন সব বয়সের ক্রেতারা। জাকজমক পূর্ণ এ বৈশাখী মেলাটি আগামী শনিবার রাত পর্যন্ত চলবে।