সিরিয়ার আলেপ্পো নগরীতে বুধবারের অস্ত্রবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার আগেই ভেঙে পড়ার পর, এবার নতুন অস্ত্রবিরতি চুক্তি কার্যকর হতে যাচ্ছে বলে বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার বিদ্রোহীরা সিরিয়ার সরকারি বাহিনীকে পূর্ব আলেপ্পো ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে যুদ্ধ সমাপ্তির ঘোষণা আসে। রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যস্ততায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত বাহিনী এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে চুক্তি কার্যকরের কথা ছিল বুধবার থেকে। আলেপ্পোর অধিবাসীদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরুর কথা ছিল স্থানীয় সময় ভোর ৫টা থেকে। কিন্তু তা শুরু হয়নি। এর কয়েক ঘণ্টা পরই শুরু হয় প্রচণ্ড গোলাগুলি।
বুধবার রাতে বিদ্রোহীরা জানান, নতুন একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তি কার্যকর হতে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্রোহীরা আলেপ্পো ত্যাগ করবেন।
আলেপ্পোর যে দুটি গ্রাম এখনও বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেখান থেকে লোকজনকে সরে যেতে দেওয়ার পরই নগরীতে অস্ত্রবিরতি কার্যকরের পক্ষে মত দিয়েছে সিরীয় সরকার ও তার মিত্র ইরান।
নতুন অস্ত্রবিরতির কথা সিরিয়ার সরকার বা রাশিয়ার পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়নি। তবে আসাদ সরকারের অন্যতম সমর্থক লেবাননের সশস্ত্র শিয়া সংগঠন হিজবুল্লাহ এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, ‘বহু বাধা-বিঘ্ন’ সত্ত্বেও নতুন অস্ত্রবিরতি চুক্তির বিষয়ে বিদ্রোহীদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।
এর আগে বুধবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর)-এর মুখপাত্র রামি আবদুলরহমান বলেন, ‘ভয়ঙ্কর সংঘর্ষ চলছে, প্রচণ্ড মাত্রায় বোমা হামলা চলছে। এতে মনে হচ্ছে যুদ্ধ বিরতির সব কিছুই ভেস্তে গেছে।’ তিনি আরও জানান, বিদ্রোহীদের অবস্থান লক্ষ্য করে নতুন করে বিমান হামলা চালানো হচ্ছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হোয়াইট হেলমেটস-এর মুখপাত্র ইব্রাহিম আবু-লেইথ জানিয়েছেন, নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন।
অস্ত্রবিরতি ঘোষণার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল থেকে মানুষদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য অনেকগুলো বাসও পৌঁছেছিল। কিন্তু বুধবার হঠাৎ করেই আবার সংঘর্ষ শুরু হয়।
সিরিয়ায় জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি স্তেফান ডি মিস্তুরা জানিয়েছেন, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ আটকা পড়ে আছেন। তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, আটকা পড়া মানুষের সংখ্যা এক লাখেরও বেশি।
মিস্তুরা আরও বলেন, এসব অঞ্চলে অন্তত দেড় হাজার বিদ্রোহী রয়েছেন। এদের ৩০ শতাংশই জঙ্গি সংগঠন ফাতেহ আল শাম (প্রাক্তন নুসরা ফ্রন্ট)-এর সঙ্গে জড়িত।
২০১২ সাল থেকে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পূর্ব আলেপ্পো। সম্প্রতি সরকারি বাহিনী অঞ্চলটির অধিকাংশ জায়গা দখল করে নেওয়ায় বিদ্রোহীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে।