ব্রাজিলের যে কারাগারে নেই কোন রক্ষী, নেই কোন অস্ত্র

Date:

Share post:

প্রথম যেদিন কারাগারে নিজের সেলে ঢুকলেন, সেদিন আয়নায় নিজেকে দেখে চিনতে পারেন নি তাতিয়ানা কোরেইয়া দ্যা লিমা।

“আয়নায় নিজেকে দেখে এত অদ্ভুত লাগছিল! দেখে চিনতেই পারছিলাম না।” বলছিলেন ২৬-বছর বয়সী লিমা। বারো বছরের সাজা মাথায় নিয়ে দুই সন্তানের এই মা জেল খাটছেন।

ব্রাজিলে কারাবন্দীর মোট সংখ্যা বিশ্বের চতুর্থ। কারাগারের ভেতরের শোচনীয় অবস্থা নিয়ে প্রায়ই তুমুল আলোচনা চলে। পাশাপাশি রয়েছে ধারণ ক্ষমতার বেশি বন্দী এবং কারাগারের ভেতরে গুণ্ডা দলের দৌরাত্ম্য, মাঝে মধ্যেই যা থেকে দাঙ্গা হাঙ্গামা তৈরি হয়।

লিমাকে মূল কারাগার থেকে সরিয়ে ইটুয়ানার যে কারাগারে নেয়া হয়েছে সেটি পরিচালনা করে ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্যা প্রোটেকশন অ্যান্ড অ্যসিসটেন্স টু কনভিক্টস (এপ্যাক) নামে টি সংস্থা।

গার্ডবিহীন জেলখানা
ব্রাজিলে অন্য কারাগারের চেয়ে এই কারাগারটি একেবারেই ভিন্ন। এখানে নেই কোন কারারক্ষী। নেই কোন অস্ত্র।

মূল কারাগারে যেখানে বন্দীদের জন্য রয়েছে ্দিষ্ট পোশাক, সেখানে এই কারাগারটিতে লিমা তার নিজের কাপড়ই পরতে পারেন। তার সেলে রয়েছে আয়না, মেকআপ করার সরঞ্জাম।

ব্রাজিলের কারা সঙ্কটের পটভূমিতে এপ্যাক পরিচালিত কারাগারগুলি অনেক বেশি নিরাপদ, সস্তা, এবং মানবিক বলে স্বীকৃতি পাচ্ছে।

গত ২০শে মার্চ ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলের রনডোনিয়া এলাকায় এপ্যাক পরিচালিত একটি কারাগারের উদ্বোধন করা হয়। সারা দেশে এধরনের ৪৯টি কারাগার রয়েছে।

এখানে যে ধরনের বন্দীদের আনা হয় তাদের বেশিরভাগই আসে মূল কারা বস্থা থেকে। এরা যে তাদের অপরাধের জন্য অনুশোচনা করছেন সেটা তাদেরকে প্রমাণ করতে হয়। নিয়মিত শ্রম দেয়া এবং ্ষা করার ব্যাপারে এই কারাগারের যেসব নিয়মকানুন রয়েছে তা কঠোরভাবে করা হয়।

কারাগারে রয়েছে ‘কনজ্যুগাল সুইট’, যেখানে রয়েছে ডাবল বেড খাট। দেখা করতে আসা স্বামীদের সাথে বন্দীরা এখানে ‘ঘনিষ্ঠ সময়’ কাটাতে পারেন।

কারাগারের একপাশে গিয়ে দেখা গেল নারীরা সাবানের বোতলে লেবেল লাগাচ্ছেন। বন্দীদের তৈরি এই তরল সাবান বাইরে বিক্রি করা হবে।

প্রথম এপ্যাক কারাগার স্থান করা হয় ১৯৭২ সালে। একদল ক্যাথলিক খ্রিস্টান এটি তৈরি করেছিলেন। এখন এভিএসআই ফাউন্ডেশন নামে ইতালির একটি এনজিও এবং ব্রাজিলের সাবেক কারাীদের একটি প্রতিষ্ঠান এর অর্থায়ন করে থাকে।

এভিএসআই ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি জ্যাকোপো সাবাতিয়েলো বলছেন, তাদের কারাগারের মূল নীতি হচ্ছে কঠোর পরিশ্রম এবং অন্যের প্রতি ভালবাসা।

রা সব বন্দীকে তাদের নাম ধরে ি। নাম্বার দিয়ে কোন বন্দীর পরিচয় দেই না।”

শুশ্রূষা
এই কারাগারের বন্দীদের ডাকা হয় ‘রিকুপারেন্দোস’ নামে অর্থাৎ যাদের আরোগ্যলাভের প্রক্রিয়া চলছে। এক্যাপ বন্দীদের পুনর্বাসনের দিকে জোর দিয়ে থাকে।

বন্দীদের সারাদিন ধরে কাজ এবং পড়াশুনা করতে হয়। কখনও কখনও স্থানীয় লোকজনের সাথে কাজ করতে হয়।

কোন বন্দী পালানোর চেষ্টা করলে মূল কারা ব্যবস্থার হাতে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়।

মি. সাবাতিয়েলো বলছেন, এপ্যাকের কারাগারে মারামারির দু’একটা ঘটনা ঘটলেও খুন রাহাজানির মতো কোন বড় অপরাধের নজির নেই।

তিনি বলছেন, কারাগারে কোন রক্ষী না থাকায় উত্তেজনা কম থাকে। এখানে কিছু নারী রয়েছেন যারা যাবজ্জীবন সাজা খাটছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ ভায়াবহ অপরাধ ঘটিয়েছেন।

“আমি এখনও আমার পুরনো বন্দী সংখ্যা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছি,” বলছেন আগিমারা পাত্রিসিয়া সিলভিয়া কাম্পোস। মাদক চোরাচালানের দায়ে মূল কারাগারে তাকে চার মাস কাটাতে হয়েছিল।

“আমাদের গাদাগাদি করে থাকতে হতো। ছোট একটা ঘরে ২০ জন বন্দী। ঘুমাতে হতো নোংরা তোষকের ওপর,” বলছিলেন তিনি, “আর যে খাবার দেয়া হতো তা মুখে তোলার মত ছিল না।”

তার সাথে দেখা করতে আসা আত্মীয়দের নগ্ন করে তল্লাশি করা হতো বলে তিনি জানালেন।

কাম্পোস যে পরিবেশের কথা বলছেন তা ব্রাজিলের কারা ব্যবস্থার একটা বড় সঙ্কটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রাজিলে প্রায়ই নারীদের কারাগারে যেতে হয় তার পুরুষ সঙ্গীর অপরাধের জন্য। এরপর দাগী আসামীদের মধ্যে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। অনেকেই কারাগারের মধ্যেই অপরাধের তালিম নেন।

“আমি যখন যাই, তখন এই ধরনের অপরাধ সম্পর্কে আমার কোন ধারনাই ছিল না,” বলছেন কাম্পোস, “আমার পাশে যে মহিলা ঘুমাতো সে তার প্রতিবেশীর মাথা কেটে ফেলেছিল। এবং সেই কাটা মাথা একটি সুটকেসে ভরে রেখেছিল।”

দুই সন্তানের জননী এখন আট বছরের জেল খাটছেন।

ব্রাজিলের একজন বিচারক আন্তোনিও দ্যা করাভালহো বলছেন, মূল কারা ব্যবস্থায় কাজ এবং শিক্ষার মাধ্যমে দণ্ড কমানোর প্রথা থাকলেও এটা প্রয়োগ করা হয় সামান্যই। তিনি এপ্যাক কারা ব্যবস্থার একজন সমর্থক।

“মূল কারা ব্যবস্থার বর্তমান হাল খুব দু:খজনক। ব্রাজিলের বিচার ব্যবস্থার মধ্যে থেকে বন্দীর মানবাধিকার রক্ষা করতে চাইলে এপ্যাক ব্যবস্থাই সবচেয়ে কার্যকারী,” তিনি বলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

চট্টগ্রামের আলোচিত সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে ঢাকার বসুন্ধরা সিটি থেকে গ্রেফতার

চট্টগ্রামের আলোচিত সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে ঢাকার বসুন্ধরা সিটি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার (১৫ মার্চ)...

চট্টগ্রামে মসজিদের মাইকে ‘ডাকাত’ ঘোষণা দিয়ে গণপিটুনি, নিহত ২

স্থানীয় প্রতিনিধি সোমবার (৩ মার্চ) রাত ১০টার দিকে উপজেলার কাঞ্চনা ছনখোলা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- নেজাম উদ্দিন...

জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ; আহ্বায়ক নাহিদ, সদস্য সচিব আখতার

শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মানিকমিয়া অ্যাভিনিউতে নতুন রাজনৈতিক দল ও আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিবের নাম ঘোষণা করেন জুলাই-আগস্ট...

গুলিবিদ্ধ অভিনেতা আজিজুর রহমান আজাদ

সময় ডেস্ক বেশ কিছু নাটক করে বেশ অল্প সময়েই দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন অভিনেতা আজিজুর রহমান আজাদ। নাটকের পর্দায়...