সৌদির মাথা ঠান্ডা করতে সাহায্য চায় কানাডা

Date:

Share post:

সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে রিয়াদের সমাোচনা করায় বেশ বিপাকে পড়েছে কানাডা কারাবন্দী অধিকারকর্মীদের মুক্তি দিতে রিয়াদের প্রতি সাদামাটাভাবেই ন জানিয়েছিল অটোয়া। এ আহ্বানেই গে আগুন সৌদি আরব। সর্বশেষে কানাডায় সৌদি নাগরিকদের সব ধরনের চিকিৎসা কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছে সৌদি আরব। একি দেশটিতে বর্তমানে চিকিৎসাধীন যেসব সৌদি নাগরিকেরা আছেন তাদের কানাডার বাইরে অন্য কোথাও চিকিৎসার ব্যবস্থা করার বিষয়েও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ অাবস্থা কাটাতে সৌদি আরবের মিত্রদের দিকে হাত বাড়িয়েছে কানাডা। তারা চায় দ্রুত সমস্যার সমাধান। তবে এখন পর্যন্ত লেনি সাড়া।

এক গোপন সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের সঙ্গে অচলাবস্থা কাটাতে, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ব্রিটেনের সহযোগিতা চেয়েছে কানাডা। দেশগুলোকে কানাডা আহ্বান জানিয়ে বলেছে, সংকটে মধ্যস্থতা করার জন্য।

এদিকে কানাডার অন্যতম বাণিজ্যিক ও সামরিক অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র সৌদি ও কানাডার মধ্যকার বিরোধের মাঝে নিজেদের এই সংকট থেকে দূরে রেখেছে। দেশটি হয়তো এ ব্যাপারে কিছুই বলছে না। ফলে সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ভালোই বিপদে পড়েছে কানাডা।নাম প্রকাশ না করার শর্তে সূত্রটি রয়টার্সকে জানিয়েছে, সৌদি আরবের মাথা ঠান্ডা করতে আঞ্চলিক মিত্রদের দ্বারস্থ হবে কানাডা। এর মধ্যে প্রধান হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। তারা চায় দ্রুত বিষয়টি মীমাংসা করতে। আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, কানাডা এই সংকট কাটাতে ব্রিটেনের সহযোগিতাও চাইছে। ব্রিটেন সরকার উভয় দেশকে মাথা ঠান্ডা রাখার পরামর্শ দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বলেছে, সৌদি ও কানাডাকে বিরোধ থেকে বিরত থাকতে হবে।

মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের মুখপাত্র হিথার নাওয়ার্ট এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘উভয় পক্ষের উচিত কূটনৈতিকভাবে একসঙ্গে এই সমস্যার সমাধান করা। আমরা তাদের জন্য এটা করতে পারি না, কাজটা তাদেরই করতে হবে।’

তবে সৌদির মিত্রদের দিকে মধ্যস্থতার জন্য কানাডা কারও দ্বারস্থ হচ্ছে কি না, এ বিষয়ে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড কোনো মন্তব্য করতে চাননি। সূত্র জানিয়েছে, শুরুতে বিষয়টি নিয়ে দেশের পররাষ্ট্রবিষয়ক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করেছে জাস্টিন ট্রুডোর সরকার। তাদের পরামর্শেই হয়তো সৌদি মিত্রদের দিকে হাত বাড়িয়েছে দেশটি। কিন্তু সৌদি রয়েছে অনড় অবস্থানে। শুধু তা–ই নয়, কানাডার বিরুদ্ধে আরও কঠোর হতে যাচ্ছে দেশটি। সৌদি আগেই জানিয়ে দিয়েছে, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের নাগ গলানো সহ্য করবে না তারা। সর্বশেষ চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে কানাডার প্রতি সৌদি আরবের কূটনৈতিক কঠোরতা আরও জোরদার হলো।

কানাডা সরকারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর উদারপন্থী সরকার উত্তেজনা প্রশমনে আমিরাতের সহায়তা নেওয়ার কথা ভাবছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, বন্ধু ও মিত্রদের সহযোগিতা নিয়ে শিগগিরই সৌদির সঙ্গে উত্তপ্ত পরিস্থিতি শীতল করতে চায় কানাডা। আরেকজন কর্মকর্তা জানান, কানাডা এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকেও সহায়তা চাইতে পারে। যদিও গত মঙ্গলবার ব্রিটিশ সরকার কানাডা ও সৌদি আরবকে সংযত আচরণ করার আহ্বান জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় নিযুক্ত সৌদি স্বাস্থ্য দূত ডা. ফাহাদ বিন ইব্রাহিম আল তামিমির বরাত দিয়ে সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, সৌদি নাগরিকদের জন্য কানাডায় চিকিৎসা নেওয়া বন্ধ করতে যাচ্ছেন তাঁরা। এখন থেকে চিকিৎসার জন্য কানাডায় কোনো রোগী পাঠাবে না দেশটি। এমনকি যেসব রোগী এখন সেখানে চিকিৎসাধীন, তাদেরও অন্য দেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে সরকার।

সৌদি সরকার কানাডায় পড়ছেন এমন ১৫ হাজার সৌদি নাগরিককে কানাডা থেকে ফিরতে বলেছেন বলে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে। দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েনে বছরে ৪০০ কোটি ডলারের ীয় বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সৌদি আরবে ২০১৭ সালে কানাডা মোট ১১২ কোটি ডলারের পণ্য করে, যা দেশটির মোট রপ্তানির দশমিক ২ শতাংশ। কানাডা বলেছে, সৌদি আরবের কাছে তাদের তৈরি সামরিক ট্যাংক বিক্রির জন্য ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের যে চুক্তি হয়েছিল, তার কী হবে সেটা তারা জানে না। অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ থমাস জুনোও বলেন, এই চুক্তির বিষয়ে সৌদি কী সিদ্ধান্ত জানায়, সেটার ওপর বোঝা যাবে সমস্যার সমাধানে তারা কতটা আগ্রহী।

মিসর জানিয়েছে, তারা সৌদির পক্ষে আছে। সৌদির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলিয়ে কানাডা ঠিক কাজ করেনি বলে তারা মনে করে। মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ফেসবুক পেজে নিজেদের অবস্থানের ব্যাখ্যা দিয়ে বলে, কিছু আন্তর্জাতিক পক্ষ অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলিয়ে এমন নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি করে।

মানবাধিকার প্রশ্নে সৌদি আরব ও কানাডার মধ্যে যে কূটনৈতিক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, তা প্রশমিত হওয়ার কোনো লক্ষণ আপাতত নেই। কারণ, দুই দেশের কেউ-ই ছাড় দেওয়ার অবস্থানে নেই। তবে এই উত্তেজনার সবচেয়ে লক্ষণীয় দিক হলো রিয়াদের চরম আগ্রাসী মনোভাব। পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, কানাডা ও সৌদি আরবের মধ্যকার উত্তেজনাকর সম্পর্কে প্রতীয়মান হয়, রিয়াদ আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে। দেশটির এমন নীতি গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।

সম্প্রতি সৌদি আরবে মানবাধিকারকর্মীদের কারাগারে পাঠানোর সমালোচনা করে অবিলম্বে তাঁদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানায় কানাডা। আটক এসব মানবাধিকারকর্মীর মধ্যে কানাডার নাগরিকদের কয়েকজন স্বজনও আছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সৌদি আরব অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে তাদের দেশে নিযুক্ত কানাডার রাষ্ট্রদূত ড্যানিশ হোরাককে বহিষ্কার করে। কানাডার সঙ্গে কয়েক শ কোটি ডলারের নতুন বাণিজ্য ও বিনিয়োগ স্থগিত করার পাশাপাশি উড়োজাহাজ চলাচলও স্থগিত রাখার কথা জানায় সৌদি আরব। এ ঘটনায় কারাগারে আটক মানবাধিকারকর্মীদের বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য দিতে এবং তাঁদের ব্যাপারে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণে সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানিয়ে দায় সারে যুক্তরাষ্ট্র।

যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানের হাত ধরে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে সৌদি আরব। নারীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানসহ অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি। সৌদি আগেই জানি দিয়েছে, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ তারা সহ্য করবেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

গাজায় গণহত্যা চলছেই, একদিনে ইসরায়েলি হামলায় ১৪০ ফিলিস্তিনি নিহত

গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় কমপক্ষে ১৪০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাতে...

ইসরায়েলকে শাস্তির হুমকি দিয়ে ভাষণ শুরু করলেন খামেনি

ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে ভাষণ দিচ্ছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ভাষণের...

ট্রাম্পের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের ডাক প্রত্যাখ্যান করলেন ইরানের খামেনি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে নিঃশর্তে আত্মসমর্পণ করার যে আহ্বান জানিয়েছিলেন তা প্রত্যাখ্যান করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা...

৪০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান, ৪০টির বেশি লক্ষ্যবস্তু নিশ্চিত ক্ষতিগ্রস্ত: ইসরায়েল

ইসরায়েলি সরকারের প্রেস অফিস এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, গত ১৩ জুন থেকে ইরান ৪০০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং...