
মার্কিন টিভি সিরিজ কোয়ান্টিকোর একটি বিতর্কিত পর্বকে ঘিরে হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা সোশাল মিডিয়াতে এবার আক্রমণ করছে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত একজন আমেরিকান লেখককে।
এই আক্রমণ এতোটাই হিংস্র যে তারা ধর্ষণেরও হুমকি দিচ্ছে।
বিতর্কিত পর্বটির কাহিনীতে হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের একটি সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল । সেখানে প্রধান একটি চরিত্রে অভিনয় করে বলিউড সুপারস্টার প্রিয়াঙ্কা চোপড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন এবং ওই চরিত্রটিতে অভিনয় করার জন্যে পরে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমাও চেয়েছিলেন।
এই কাহিনী রচনায় বাংলাদেশী আমেরিকান লেখক শর্বরী জোহরা আহমেদের কোন ভূমিকা না থাকার পরেও হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা তাকে গালিগালাজ করছে।
যেসব লেখক কোয়ান্টিকোর কাহিনী লিখে থাকেন, শর্বরী জোহরা আহমেদ সেই টিমে ছিলেন শুধু প্রথম মওসুমের জন্যে। মাত্র দুটো পর্বের কাহিনী রচনার সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন তিনি। তার একটি তিনি একাই লিখেছিলেন আর দ্বিতীয়টি যে দু’জন মিলে লিখেছিলেন তিনি ছিলেন তাদের একজন।
শর্বরী জোহরা আহমেদ বারবার তার টাইমলাইনে একথা উল্লেখ করার পরেও, হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা তাকে আক্রমণ করেই যাচ্ছে। অনেকেই অভিযোগ করছে যে “শান্তিকামী হিন্দুদের বিরুদ্ধে ইসলামপন্থীদের প্রচারণার তিনি অংশ নিচ্ছেন।”
টুইটারে একজন মন্তব্য করেছেন, “কোয়ান্টিকোর কাহিনী লিখতে গিয়ে আপনি যে লিখেছেন যে ‘ভারতীয়রাই হামলার পরিকল্পনাকারী’ – তখন কি আপনার ফ্যান্টাসি কল্পনার সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল? আপনার মনের গভীরে যে পক্ষপাতিত্ব, ঘৃণা, হিন্দু-বিরোধী মনোভাব এবং ইসলামের পক্ষ নেওয়ার বিষয়গুলো প্রোথিত আছে, সেকারণেই কি এরকম লিখেছেন?”
শর্বরী জোহরা আহমেদ বলেছেন, তিনি আশা করছিলেন যে যখন তারা জানতে পারবে এই পর্বটির সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই, তখন তারা হয়তো চুপ করে যাবেন। কিন্তু সেরকম কিছু হয়নি।
তিনি বলেন, “আক্রমণের মাত্রা খুব দ্রুতই বেড়েছে। এসব এতোই হিংস্র হয়ে উঠেছে যে যারা আমাকে সমর্থন করছেন তাদেরকেও তারা সহিংসতা ও ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছে।”
তিনি বলছেন, যারা তাকে আক্রমণের হুমকি দিচ্ছে তারা তাকে ভারত-বিরোধী এবং হিন্দু-বিরোধী প্রচারণায় একজন মুসলিম এজেন্ট হিসেবে দেখছে।”
“তারা গুগলে সার্চ করে অথবা স্ক্রিনে যাদের নাম লেখা থাকে সেই তালিকা দেখে জেনে নিতে পারেন যে আসল সত্যটা কী।”
‘দ্য ব্লাড অফ রোমিও’ নামের এই পর্বটি প্রচারিত হয়েছিল ১লা জুন যেখানে দেখা গেছে অ্যালেক্স পারিশ নামের প্রধান চরিত্রটি একটি সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনাকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন। ওই এজেন্টের চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া।
কাশ্মীরের উপর এক সম্মেলনের আগে এই হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল এবং কাহিনীতে দেখানো হয়েছে যে আসলে কয়েকজন হিন্দু জাতীয়তাবাদী এই পরিকল্পনা করেছিলেন কিন্তু তারা দোষ দিতে চেয়েছিলেন পাকিস্তানিদের।
আরো পড়তে পারেন:
বিশ্বকাপে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন যারা
নারী ক্রিকেটারদের বেতন বৈষম্য: পরিবর্তন আসবে?
তীব্র প্রতিক্রিয়ার পর এই থ্রিলারের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এবিসি এবং প্রিয়াঙ্কা চোপড়া দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। এবিসি থেকে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার পক্ষে বক্তব্য দেওয়া হলেও শর্বরী জোহরা আহমেদের বেলাতে তারা কিছু বলেনি।
সিরিজের স্ক্রিপ্ট লেখার সাথে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার দুঃখ প্রকাশ করায় বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এই আমেরিকান লেখক হতাশ হয়েছেন। তিনি নিজেও এর আগে কট্টর ইসলামের উত্থান এবং বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।
“আমার মনে হয়েছে যে তারা (এবিসি এবং চোপড়া) যারা ভয় দেখাচ্ছিল তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।”
আরো পড়তে পারেন:
কূটনৈতিক মেন্যুতে সিঙ্গাপুরে কি খেলেন ট্রাম্প-কিম?
যেখানে পুরুষের চেয়ে নারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বেশি
সরকারি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার আপত্তি কেন?
Source from: http://www.bbc.com/bengali/news-44466633