রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় একটি মন্দিরের নয়টি প্রতিমা ভাংচুর এবং প্রতিমার বস্ত্র খুলে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।
সোমবার গভীর রাতে উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের রাজারামপুর মঠখোলাপাড়ার রাধা গোবিন্দ জিও মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে।
মন্দিরের জমি ও কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। মন্দির কমিটি বিরোধী পক্ষকে আসামি করে একটি মামলা করেছে।
জানা গেছে, মঠখোলাপাড়ার রাধা গোবিন্দ জিও মন্দিরের নামে রাজারামপুর এলাকায় প্রায় আড়াই একর জমি রয়েছে। ওই জমির ভোগদখল নিয়ে বর্তমান কমিটির সঙ্গে বিগত কমিটির রবিন চন্দ্র ও দিলীপ চন্দ্রের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়।
এ নিয়ে রবিনের লোকজনের সঙ্গে বর্তমান কমিটির দ্বন্দ্ব বিরাজ করছিল। একে অপরের ওপর প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দিয়ে আসছিল। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দুর্বৃত্তরা ওই প্রতিমা ভাঙচুর ও প্রতিমার বস্ত্রহরণের ঘটনা ঘটায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে মন্দিরের ওই ভাংচুরের ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমান মন্দির কমিটির সভাপতি নরেশ চন্দ্র রায় বাদী হয়ে ওই মামলায় এলাকার রবিন চন্দ্র রায় ডায়ডোলা ও দিলীপ চন্দ্র রায়সহ অজ্ঞাত ১০ দুর্বৃত্তের নাম উল্লেখ করেন।
মামলা দায়েরের পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নমুনা সংগ্রহ করেছে।
এলাকাবাসী জানায়, হিন্দু ধর্মের ভগবান শ্রী কৃষ্ণের রাসযাত্রা উপলক্ষে রাজারামপুর মঠখোলাপাড়া মন্দিরে সাত দিনব্যাপী রাস মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলা শুরু হয় গত গত ১৪ নভেম্বর। শেষ হয় গত সোমবার।
মেলা শেষ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যে যার মতো নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যায়। ওইদিন গভীর রাতে একদল দুর্বৃত্ত মন্দির চত্বরের ভেতরে থাকা রাধা ও শ্রী কৃষ্ণের অষ্টসখীর প্রতিমাগুলোর মাথা ভেঙে ফেলে। এরপর তারা প্রতিমার পরিধেয় বস্ত্রগুলো খুলে নিয়ে যায়।
মঠখোলাপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় আড়াইশ’ লোকজন বসবাস করেন। পাশের মুসলমানদের সঙ্গে রয়েছে তাদের ভালো সম্পর্ক। কারো সঙ্গে কোনো বিরোধও নেই।
মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক দীপু চন্দ্র রায় বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে আমাদের সম্প্রদায়ের লোকজনই জড়িত কি না অনুসন্ধান করা করে দেখা হোক। শুধু তাই নয়, তৃতীয় কোনো পক্ষ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এলাকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে কি না সেটাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’
তবে তিনি বলেন, ‘কমিটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রবিন ও দিলীপ আমাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালিয়েছে। এমনকি তারা মন্দিরে পূজা দিতেও লোকজনকে বাধা সৃষ্টি করে আসছিল।’
মন্দির কমিটির সভাপতি নরেশ চন্দ্র রায় বলেন, লোকজনকে বিভ্রান্ত করতেই শত্রুতা করে প্রতিমার মাথাগুলো ভেঙে দেয়া হয়েছে। আশপাশের অন্য ধর্মের কোনো লোক এতে জড়িত নয় বলে তিনি দৃঢ় বিশ্বাস করেন।
তিনি বলেন, ‘এ কারণে রবিন ও দিলীপ নামে দুইজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। আমাদের সন্দেহ তাদের উস্কানিতেই মন্দিরের প্রতিমাগুলো ভাঙা হয়।’
বদরগঞ্জ থানার ওসি আখতারুজ্জামান প্রধান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- মন্দির কমিটির বিরোধে দুর্বৃত্তরা প্রতিমাগুলো ভেঙে ফেলে। একারণে দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।’
ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না জানতে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।