চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে অবস্থিত র্যাব-৭-এর ব্যাটালিয়ন সদর দফতর থেকে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পলাশ সাহার গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তার বয়স হয়েছিল ৩৭ বছর।
বুধবার (৭ মে) দুপুরে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। ঘটনাস্থলে একটি চিরকুট উদ্ধার হওয়ায় এটি আত্মহত্যা কি না, তা ঘিরে তদন্ত চলছে।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফতাব উদ্দিন জানান, মরদেহটি উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ঘটনার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আমিরুল ইসলাম জানান, ‘এএসপি পলাশ সাহার মরদেহ তার নিজ কার্যালয়ের কক্ষে পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি চিরকুটও উদ্ধার করা হয়েছে, যাতে মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী না করার কথা লেখা রয়েছে।’
চিরকুটে যা লেখা ছিল
ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা চিরকুটে লেখা ছিল— ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারিনি। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তাঁরা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা কিছু আছে, তা মায়ের জন্য। দিদি যেন সবকিছু কো-অর্ডিনেট করে।’
চিরকুটের ভাষা থেকে এটিকে ‘আত্মহত্যা’ হিসেবে সন্দেহ করা হলেও পুলিশ ও র্যাব বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে পলাশ সাহাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার কানের পাশে একটি গর্তের মতো চিহ্ন রয়েছে, যেখান থেকে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এটি গুলির আঘাত কি না, তা ময়নাতদন্ত ছাড়া নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।’
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার ইন্তেখাব চৌধুরী গণমাধ্যমকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে র্যাব-৭-এর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো মন্তব্য দেওয়া হয়নি।
৩৭তম ব্যাচের ক্যাডার
গোপালগঞ্জ জেলার বাসিন্দা পলাশ সাহা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ৩৭তম ব্যাচের মাধ্যমে পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেন। সম্প্রতি তিনি র্যাব-৭-এ সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখায় কর্মরত ছিলেন।
আত্মহত্যা না পরিকল্পিত কিছু?
পুলিশ ও র্যাবের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, পলাশ সাহার মৃত্যুর পেছনে ব্যক্তিগত হতাশা, পারিবারিক সমস্যা কিংবা চাকরিসংক্রান্ত কোনো চাপ ছিল কি না—তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চিরকুটে ব্যক্তিগত দায় স্বীকার করলেও বিষয়টির পেছনে অন্য কোনো প্ররোচনা বা গাফিলতি ছিল কি না, সেটিও তদন্তাধীন।
চলছে খোঁজখবর
চট্টগ্রামের সিএমপি ও র্যাব যৌথভাবে ঘটনাটির তদন্তে কাজ করছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও ফরেনসিক বিশ্লেষণের পর প্রকৃত কারণ উদঘাটনের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও বিস্তারিত জানাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।