চট্টগ্রাম নগরবাসীর কাছে পাহাড়তলী বাজার অনেক পরিচিত একটি বাজার। বিশাল এলাকাজুড়ে এ বাজার বিস্তৃত হলেও নেই কোন নিয়মনীতি। চাল, ডাল, তেল, কাঁচা বাজার, কাপড়,মাছ-মুরগী,কসমেটিক ও গ্রোসারী সপ সহ প্রায় সাতশত ব্যবসায়ী বিভিন্ন রকম ব্যবসা করা দিনযাপন করছে। পাইকারী বাজার নামেও চট্টগ্রামে এটি খ্যাত। পাহাড়তলী, ডবলমুরিং, হালিশহর ও আকবর শাহ চট্টগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ৪টি থানার মধ্যে এটি একমাত্র বড় বাজার। ১৯৯৪ সালের মার্চ মাসে এ সমিতির প্রতিষ্ঠিত হয়ে কিছু সাধারণ ব্যবসায়ী ব্যবসার মাধ্যমে সুন্দরভাবে দিনযাপন করিয়া আসছে। ২০১৪ সালের পূর্বে বেশ কয়েকবার নির্বাচন হয়েছিল। কিন্তু গত ছয় বছরে নির্বাচন বিহীন চলছে আহবায়ক কমিটি দ্বারা, যার ফলে বাজার অনুন্নত ও অনিয়মে ভরপুর এর অভিযোগ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির।
গত ২৬ শে নভেম্বর ২০১৪ এ বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছাবের আহমদ সওদাগর নামস্তে একটি দোকানের সদস্য হয়ে আহবায়ক কমিটি করেন। যে কমিটিতে নিজেই আহবায়ক হয়ে ৪ জন যুগ্ম আহবায়ক করেন, যুগ্ম আহবায়কগণ হলেন (১) আ.জ.ম. সেলিম, (২) আবদুল বারেক (৩) নাজমুল হুদা ও (৪) চন্দন ধর ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার কথা থাকলেও ৬ বৎসর অতিক্রম করছে কোন নির্বাচন না দিয়ে, যার ফলে নানা অনিয়ম ও আত্মসাৎ এর অভিযোগ এনেছেন সাধারণ ব্যবসায়ীবৃন্দ।
মাসিক চাঁদা ৬০ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও কিছু কিছু দোকান হতে ১০০-১৮০ টাকা মাসিক চাঁদা নেয়া হচ্ছে। ৭০০ দোকানের এ মাসিক চাঁদা কোন খাতে যাচ্ছে তারও নেই কোন হদিস। মাল লোড আনলোডের ক্ষেত্রেও নেই কোন সীমাবদ্ধতা। আহবায়ক ছাবের আহমদ সওদাগর এলাকার কিছু লোকাল ছেলেদের মাসিক ৫০-৭০ হাজার টাকা মাসিক চুক্তিতে মাল লোড আনলোড এর কন্টাক্ট দেয়। যার ফলে তারা ছোট ট্রাক হতে ২০০ বড় বড় ট্রাক হতে ৩০০ টাকা নেয়। দৈনিক ১২০-১৫০ ট্রাক ছোট বড় মিলে লোড আললোড হয়। এতে করে ব্যবসায়ীরা কষ্ট চেপে ব্যবসা করছে। ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারছেন। লোড আনলোডের জন্য মাসিক ৪,০০০-৫০০০ টাকা বেতনে ৪/৫ জন লাইনম্যানকে নিয়োগ দেয়া হয়। মূলত তারাই মাল লোড আনলোডের টাকা সংগ্রহ করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, কাউন্সিলর ছাবের আহমদ সওদাগর বাজারের কোন দোকানের মালিক বা ব্যবসায়ী না হয়েও গত ছয় বছর ধরে আহবায়ক হয়ে বিভিন্ন ফায়দা লুটে নিচ্ছে। বর্ষাকালে আমাদের চলাফেরা সহ ব্যবসা করতে অনেক কষ্ট হয়।
কারণ বর্ষার পানি জমে দোকানে পর্যন্ত ঢুকে যায়। আমরা এর থেকে রেহাই চাই। আমরা চাই ব্যবসায়ীদের ভোটে একটি সুষ্ঠু সমিতি। যেখানে থাকবে না কোন অনিয়ম দুর্নীতি, জনাব ছাবের সাহেব ওয়ার্ড জনপ্রতিনিধি উনি আমাদের ছাতা, আমরা মনে করি উনি আমাদের সুযোগ সুবিধা দেখবেন। উনি যদি নির্বাচন দিয়ে সুষ্ঠু একটা রেলওয়ে বাজার সমবায় কল্যান সমিতি করে দেন তাহলে আমরা সাধারণ ব্যবসায়ীরা ছেলে মেয়ে নিয়ে ভালোভাবে বাঁচতে পারবো।
আরও জানা যায়, বহু বছরের পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির নাম পরিবর্তন ২০১৪ সালে পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজার সমবায় সমিতি নাম দেন। আরো অভিযোগ উঠে ছাবের আহমদ সওদাগর একজন চার্জশীটভুক্ত আসামী। ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসে কেন্দ্রিয় ছাত্রনেতা মহিউদ্দীন সোহেল হত্যার ১ নম্বর আসামী এ ছাবের আহমদ সওদাগর। পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজার কল্যাণ সমিতি গঠনের পূর্বে পর্যন্ত ঐ এলাকা ছিল মাদকের আস্তানা, ওখান থেকে চট্টগ্রামের প্রায় জায়গায় মাদক ও চোরাচালান হত। রেলওয়ে বাজার হওয়ার পর ঐ এলাকা হয় মাদকমুক্ত ব্যবসায়ীরা সংঘবদ্ধ হয়ে মাদক উৎখাত করতে সক্ষম হয়। কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে আলাপকালে জানা যায় ব্যবসায়ীদের সর্বশেষ চাওয়া অনিয়ম দূর্নীতিমুক্ত নিরপেক্ষ সুষ্ঠু ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি ।
নির্বাচন ছাড়াই চলছে পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি।
Date:
Share post: