‘ওরাল সেক্স’ এর কারণে ভয়ঙ্কর মাত্রার ব্যাকটেরিয়া ছড়াচ্ছে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

Date:

Share post:

একজন আরেকজনের সঙ্গে মিলিত হচ্ছেনছবির কপিরাইট Getty Images

বিশ্ব স্বাস্থ্য ্থা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, কনডম ব্যবহারে অনিহার কারণে গনোরিয়া রোগ ছড়িয়ে পড়ছে এবং ‘ওরাল সেক্স’ এর কারণে গনোরিয়ার জীবাণুকে এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ভয়ঙ্কর মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে।

সংস্থাটি আরো বলছে, এমন পরিস্থিতিতে কেউ যদি গনোরিয়ায় আক্রান্ত হয় তাহলে তার চিকিৎসা করাটা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে তা হয়ে উঠেছে ‘অসম্ভব’।

ডাব্লিউএইচও’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যৌন সংসর্গের মাধ্যমে ছড়ানো এই রোগের জীবাণু অ্যান্টোবায়োটিকের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যকর নতুন অ্যান্টোবায়োটিক উদ্ভাবনে খুব বেশি সাফল্য এখনও না আসায় পরিস্থিতি আরও বেশি নাজুক হয়ে পড়েছে।

বিশ্বে প্রায় সাত কোটি ৮০ লাখ মানুষ প্রতি বছর এ রোগ সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন, যা অনেকের ক্ষেত্রে সন্তান জন্মদানে অক্ষমতার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও অন্তত ৭৭টি দেশের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেছে, গনোরিয়ার অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠার প্রবণতা কতটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

সংস্থাটির বিশেষজ্ঞ তিওডোরা উয়ি বলছেন, জাপান, ফ্রান্স ও স্পেনে অন্তত তিনটি ঘটনা পাওয়া গেছে যেখানে গনোরিয়া পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব নয়।

“গনোরিয়ার জীবাণুকে খুবই স্মার্ট বলতে হবে। যতবার আপনি নতুন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে এর চিকিৎসা করতে চাইবেন, ততবারই তা প্রতিরোধের ক্ষমতা অর্জন করবে।”- বলছেন তিওডোরা উয়ি।

আরও চিন্তার বিষয় হলো, গরিব দেশলোতে গনোরিয়া সংক্রমণের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে; যেখানে এই জীবাণু কতটা প্রতিরোধী হয়ে উঠছে, সেই তথ্য পাওয়া কঠিন।

গলায় সংক্রমণ

গনোরিয়ার জীবাণু সাধারণত যৌনাঙ্গ, মলদ্বার বা গলার ভেতরে সংক্রমণ ঘটায়।

তবে এর মধ্যে গলার সংক্রমণই চিকিৎসকদের কাছে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ডা: উয়ি বলছেন, “সাধারণ গলাব্যথার জন্য এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করলেও তাতে নেইসেরিয়া প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করতে পারে”

“আর ‘ওরাল সেক্স’ এর মাধ্যমে যদি গনোরিয়ার ব্যাকটেরিয়া অর্থাৎ নেইসেরিয়া গনোরিয়া ওই পরিবেশ পায় তাহলে তা ‘সুপার গনোরিয়া’ তৈরি করতে পারে”।

“যুক্তরাষ্ট্রে সমকামী পুরুষদের মধ্যে গলবিলের (ফ্যারিংক্স) সংক্রমণের মাধ্যমে গনোরিয়া জীবাণু এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে” জানান ডা: উয়ি।

কনডম ছাড়া যৌন সম্পর্কে জড়ানোর কারণে এইচআইভি এইডস রোগ ছড়োনোর যেমন আশঙ্কা আছে তেমনি একই কারণে গনোরিয়া সংক্রমণের শঙ্কাও রয়েছে।

গনোরিয়া কী?

নেইসেরিয়া গনোরিয়া নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার কারণে এই রোগটি হয়।

সুরক্ষা ছাড়া যৌন সম্পর্ক বা ওরাল ও অ্যানাল সেক্সের কারণে গনোরিয়া ছড়িয়ে যেতে পারে।

এই রোগটির লক্ষণগুলো হলো- যৌনাঙ্গ থেকে হলুদ বা সবুজ রঙের পুঁজের মতো বের হতে পারে, প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া হতে পারে বা প্রস্রাব ও হয়ে যেতে পারে৷ দের তলপেটে ব্যথা ও ঋতুস্রাবে জটিলতাও দেখা দিতে পারে।

কিন্তু এই রোগে আক্রান্ত পুরুষদের মধ্যে প্রতি ১০ জনে একজন ও নারীদের তিন চতুর্থাংশ এবং সমকামী পুরুষদের ক্ষেত্রে এ রোগের লক্ষণ সহজে শনাক্ত করা যায় না।

আর এই রোগ যদি না সারে তাহলে তা বন্ধ্যাত্বের কারণও হতে পারে। গর্ভাবস্থায় এ রোগ সংক্রমণের শিকার হলে তা শিশুর শরীরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে ।

ছবির কপিরাইট CAVALLINI JAMES/SCIENCE PHOTO LIBRARY

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গনোরিয়া রোগটি আরও বিপদজনক হয়ে ওঠা ঠেকানোর জন্য দেশে দেশে পর্যবেক্ষণ জোরদারের পাশাপাশি নতুন ওষুধ তৈরির গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

‘ওরাল সেক্স’ গনোরিয়ার জীবাণুকে এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ভয়ঙ্কর মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

গ্লোবাল এন্টিবায়োটিক রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপের কর্মকর্তা ডাক্তার মনিকা বালাসেগারাম বলছেন, “পরিস্থিতি গুরুতর”।

“মাত্র তিনটি ওষুধ গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে। সেগুলোর কোনোটি কার্যকর প্রমাণিত হবে কি না, সেই নিশ্চয়তাও নেই”।

কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে গনোরিয়া নতুন ওষুধ তৈরি করতেই হবে।

লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ্যাপক রিচার্ড স্ট্যাবলার বলছেন, “গনোরিয়ার জীবাণু নতুন এন্টিবায়োটিকেও এত বেশি প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে যে গত ১৫ বছরে তিন দফায় চিকিৎসা পদ্ধতি বদলাতে বাধ্য হয়েছে চিকিৎসকেরা”।

“এখন আমরা যে ওষুধ ব্যবহার করছি এটাই আমাদের শেষ ভরসা। উদ্বেগের বিষয় হল, সেই চিকিৎসাও ব্যর্থ হওয়ার তথ্য আমরা পাচ্ছি।”

‘ওরাল সেক্স’ কি এখন সাধারণ কোনো বিষয় হয়ে উঠেছে?

বিশ্বের মানুষ এখন আগের তুলনায় ‘ওরাল সেক্স’ – এ বেশি অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে -এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয় কারণ এ নিয়ে নির্ভরযোগ্য বৈশ্বিক কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই।

তবে যুক্ত্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন তথ্য যাচাই করে বুঝা যায় যে দেশ দুটোতে এটা খুবই সাধারণ একটা বিষয়। বছরের পর বছর ধরে এমনটা হয়ে আসছে, এমনকি টিন-এজাররাও ‘ওরাল সেক্স’করছে।

যুক্তরাজ্যের মানুষের ‘সেক্সুয়াল বিহেভিয়ার ও লাইফস্টাইল’ নিয়ে জাতীয় একটি জরিপ চালানো হয় ১৯৯০-৯১ সালের মধ্যে। সেই জরিপে দেখা যায় ৬৯.৭ শতাংশ পুরুষ এবং ৬৫.৬ শতাংশ নারী প্রতি বছর তার বিপরীত লিঙ্গে কাছ থেকে ‘ওরাল সেক্স’ গ্রহণ করে বা দেয়।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি জাতীয় জরিপে গবেষকরা দেখেছেন, ১৫-২৪ বছর বয়সীদের দুই-তৃতীয়াংশই ‘ওরাল সেক্স’ এ অভ্যস্ত।

আরো পড়তে পারেন:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

গোপালগঞ্জে সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনায় সরকারের তদন্ত কমিটি

গোপালগঞ্জে ১৬ জুলাই এনসিপির সমাবেশ কেন্দ্রিক সংঘটিত সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন...

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ ঘিরে হামলা-সংঘর্ষে নিহত ২

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে হামলা-সংঘর্ষে দু’জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতরা হলেন- গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন...

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলা নিয়ে সরকারের কঠোর বার্তা

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা অত্যন্ত লজ্জাজনক বলে অভিহিত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বুধবার (১৬ জুলাই)...

শহীদ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিচার আমাদের সরকারের আমলেই সম্পন্ন হবে

‘শহীদ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিচার আমাদের আমলেই সম্পন্ন হবে’ বলে জানিয়েছেন অন্তবর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক...