ভাড়াটে খুনি, সিরিয়াল কিলার, নৃশংস খুনি—খুনির সব রকম তকমা তার রয়েছে। এই খুনির নাম মোখলেছুর রহমান।
ডাকনাম নান্নু। আন্ডারওয়ার্ল্ডের নাম মিয়া। বয়স ৩৭ বছর। খুন করা এই নান্নুর নেশা আর পেশা। যশোর সদর উপজেলার শ্যামনগর গ্রামের নান্নু একের পর এক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এক যুগে সে দুজন ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১৫ জনকে খুন করে যশোর ও ঝিনাইদহ জেলার মাটি কাঁপিয়ে অপরাধজগতের গডফাদার হয়েছে। খুনের পাশাপাশি মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েও নান্নু এখনো অধরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, হতদরিদ্র নান্নু ১৯৮৬ সালের দিকে যশোর শহরের রবীন্দ্রনাথ সড়ক এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে বয়ের কাজ নেয়। এখান থেকে মাদক ব্যবসার মাধ্যমে তার অপরাধজগতে হাতেখড়ি। খুন করার জন্য নান্নুর একটি বাহিনী রয়েছে। প্রায় ৫০ জনের এই বাহিনীর কাছে রয়েছে একে ৪৭ রাইফেল, স্টেনগান, কাটা রাইফেল, বন্দুক, আধুনিক শটগান, পিস্তল, রিভলবারসহ অনেক অস্ত্র। এই ভাড়াটে খুনি নান্নু মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয় ১৯৯৭ সালে। কিন্তু ভয়ে তার নামে কেউ মামলা করতে সাহস পায়নি। ২০০২ সালে তার নামে প্রথম একটি খুনের মামলা হয়। এর আগে নান্নু ১৯৯৭ সালে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বাদুড়গাছা গ্রামের গুরুদাস, একই বছর সুবর্ণসরা গ্রামের মোমিন, যশোর সদর উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা চকমল হোসেন, সাজিয়ালি গ্রামের আনিসকে হত্যা করলেও তার নামে মামলা দিতে কেউ সাহস পায়নি। পরে ২০১০ সালে সাজিয়ালি গ্রামের আনোয়ারুল, ২০১৫ সালে পিরোজপুর গ্রামের রইস ও ২০১৬ সালে সুবর্ণসারা গ্রামের মিন্টুকে নান্নু খুন করলেও তার নামে কেউ মামলা করতে সাহস পায়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৩ সালে নান্নু চৌগাছার সিংহঝুলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান মিন্টু, ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ কর্মী ওয়ার্কশপ কর্মচারী হাসানুজ্জামান বাবু, ২৯ মার্চ বারীনগর এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী, ২০১৬ সালের ৩১ সেপ্টেম্বর চৌগাছার পাশাপোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ও সর্বশেষ গত ১৮ নভেম্বর যশোর শহরের রেলগেট এলাকার সন্ত্রাসী হাফিজুর রহমান মরাকে খুনের অভিযোগে নান্নুকে প্রধান আসামি করে থানায় মামলা হয়।
হত্যাকাণ্ডের শিকার হাসানুজ্জামান বাবুর ভাই হাসান মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নান্নু চাঁদার দাবিতে সাতমাইল বাজারে হারুনের মাংসের দোকানটি তুলে দেয়।
আমার ভাই বাবু এর প্রতিবাদ করে। এ কারণে নওদা গ্রাম থেকে তাকে ধরে এনে দৌলতদিহি শ্মশানে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে। নান্নু একের পর এক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। আমরা তাকে আটকের দাবি জানাচ্ছি। ‘
হত্যাকাণ্ডের শিকার ইদ্রিস আলীর ভাই রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাইয়ের অপরাধ, সে নান্নুর বিভিন্ন অপকর্মের প্রতিবাদ করেছিল। ‘
শ্যামনগর গ্রামে নান্নুর একটি আলিশান বাড়ি রয়েছে। অনেক সহায়সম্পদও সে করেছে। কিন্তু তার বাবা সাইফুল ইসলাম একই গ্রামের একটি খুপড়ি ঘরে বসবাস করেন। তিনি বাঁশ দিয়ে ঝুড়ি ডালা তৈরি করে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের নামে অনেক অভিযোগ শুনি। সে কোথায় থাকে তা আমি জানি না। তার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। ‘ জানা যায়, বর্তমানে নান্নু বেনাপোল সীমান্তের ওপারে ভারতের বজরা বাজার এলাকায় গরু ব্যবসায়ী সোহরাবের বাড়িতে থাকে।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নান্নুকে ধরার জন্য পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ করছে। ‘