আফতাবের কান্নায় চোখ ভিজে যায়

Date:

Share post:

শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১০ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের। স্ট্রাইকে শোয়েব মালিক। আফতাব আলমের করা প্রথম বল থেকে তিনি কোনো রান পাননি। এতে জয়ের হালে কিছুটা পানি পেয়েছিল আফগানিস্তান। কিন্তু পরের দুই বলেই সেই হাল ভেঙে দেন মালিক। এক ছক্কা আর এক চারে। তাতে আফতাবের হৃদয়ও চূর্ণ। অঝোর কান্নায় ভেঙে পড়লেন উইকেটেই। এরপর তাঁকে ঘিরে যে দৃশ্যটা জন্ম নিল তাতে যে কোনো ক্রিকেটপ্রেমীরই চোখ ভিজে যাবে।

বলা হয়, ক্রিকেট ‘ভদ্রলোকের খেলা’। কিন্তু হাল আমলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এতই বেড়েছে যে খেলাটির ‘স্পিরিট’ ধরে রাখার সময় কোথায়! কাল পাকিস্তান-আফগানিস্তান ম্যাচে তো আরও বেশি হওয়ার কথা। এমনিতেই দুটি দেশের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছে দীর্ঘদিন ধরে। তার ওপর সুপার ফোর পর্বের ম্যাচ, যেখানে আফগানরা পাকিস্তানকে প্রায় কায়দা করে ফেলেছিল। আবার পাকিস্তানও যেন ভাঙবে তবু মচকাবে না। এই মানসিকতা থেকেই কাল দলকে দারুণ এক জয় এনে দিয়েছেন মালিক। কিন্তু গোটা ম্যাচটা যাঁরা দেখেছেন তাঁরা জানেন, দুটি দলই কেউ কাউকে এতটুকু ছাড় দেয়নি। কোনো অবস্থাতেই হারতে চায়নি। এই পরিস্থিতি থেকে পেন্ডুলামের মতো ঝুলতে থাকা ম্যাচের ভাগ্য যদি শেষ ওভারে নিশ্চিত হয়ে যায় এবং সেটি মাত্র তিন বলের ব্যবধানে—তাহলে ওই বোলারের মনের অবস্থা সহজেই অনুমেয়।

জয়ের সুবাস পেতে পেতে দলের হারের জন্য আফতাব তাই সম্ভবত নিজেই নিজেকে দাঁড় করিয়েছিলেন বিবেকের কাঠগড়ায়। ভীষণ অনুশোচনাবোধের ধাক্কাটা সামলে উঠতে পারেননি। বুকের মধ্যে দলা পাকিয়ে থাকা আবেগের বিস্ফোরণে তাই ভিজে আসা চোখ ঢেকেছেন মুখ ঢেকে। পাকিস্তান শিবিরে তখন জয়ের উল্লাস। কিন্তু মাঠের মধ্যে ভিন্ন চিত্র, বলা যায় ফ্রেমে বেঁধে রাখার মতো মুহূর্ত। অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যানের মধ্যে শোয়েব মালিক খেয়াল করেছেন সবার আগে। হারের কষ্টে প্রতিপক্ষ দলের বোলারটি কাঁদছেন। শোয়েব ছুটে গেলেন তাঁর পাশে। আফতাবের কাঁধে হাত রেখে বিড়বিড় করে কিছু বললেন এবং হাঁটু মুড়ে বসলেন তাঁর পাশে। দলের সিনিয়র ক্রিকেটারের এই আচরণ দেখে আরেক অপরাজিত ব্যাটসম্যান হাসান আলীও ছুটে যান আফতাবকে সান্ত্বনা দিতে।

গ্যালারি কিংবা টিভি পর্দায় সেই দৃশ্য দেখলে মনে হবে, জয়ী দলও প্রতিপক্ষের হারের কষ্ট ভাগ করে নিতে জানে। যেমনটা করেছেন শোয়েব। আফতাবের কাঁধে হাত রেখে কিংবা হাঁটু মুড়ে তিনি যে কথাগুলো বলেছেন তা জানা যায়নি। তবে আন্দাজ করে নেওয়া যায়—হয়তো এমন কিছুই বলেছেন, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে হেরেছ, এই জয় তোমারও। ক্রিকেটে ‘স্পোর্টসম্যানশিপ’-এর অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের প্রতি শোয়েব মালিকের এই সহমর্মিতাবোধ।

খেলাটির ‘স্পিরিট’কে যথাযথভাবে তুলে ধরার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোয়েবকে নিয়ে রীতিমতো ঝড় বইছে। একে তো ৫১ রানের ইনিংস খেলে দল জিতিয়েছেন, তার ওপর ম্যাচ শেষে সেই আবেগঘন মুহূর্তে ক্রিকেটপ্রেমীদেরও চোখ ভিজিয়েছেন। তাই দেখে পাকিস্তানের এক ক্রিকেটপ্রেমীর টুইট, ‘ছবি কথা বলে। শোয়েব মালিকের অসাধারণ স্পোর্টসম্যানশিপ। দিনের সেরা ছবি।’ আরেকজনের টুইট, ‘শোয়েব এই দুটি দেশের মধ্যে শান্তি এনে দিতে পারে।’ তবে সবার মনের কথাটাই সম্ভবত বলে দিয়েছেন পাকিস্তানের আরেক ক্রিকেটভক্ত, ‘সহমর্মিতার এমন দৃশ্য দেখলে চোখ ভিজে আসে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আবারো এস আলমে আগুন 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনির গুদামের পর এবার তেলের মিলে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের...

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...