সিরিয়ার ইদলিব নিয়ে ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি কেন তোয়াক্কা করছে না রাশিয়া

Date:

Share post:

সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে সর্বাত্মক অভিযানের জন্য বেশ কিছুদিন ধরেই রাশিয়া এবং ইরানকে সাথে নিয়ে তৈরি হচ্ছিল সিরিয়ার সেনাবাহিনী।

লড়াই বাঁধলে প্রায় ৩০ লাখ মানুষের শহরে মানবিক ট্রাজেডি তৈরি হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছিল আমেরিকা সহ বিভিন্ন পক্ষ থেকে।

সোমবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে ইদলিবে সামরিক অভিযান না চালানোর জন্য সিরিয়া এবং তার মিত্র ইরান ও রাশিয়াকে হুঁশিয়ার করেন।

কিন্তু খবর পাওয়া যাচ্ছে, সেই হুঁশিয়ারির তোয়াক্কা না করে রুশ যুদ্ধ বিমান আজ (মঙ্গলবার) ইদলিবে বেশ ক’দফা হামলা চালিয়েছে।

কেন অনেক ঝুঁকি সত্বেও ইদলিবে যুদ্ধ শুরুর পথ থেকে পিছু হটতে রাজী নয় সিরিয়া এবং রাশিয়া? প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কেন ইদলিব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন?

কেন ইদলিবের যুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ?
সিরিয়ার এই প্রদেশটি এখন বিদ্রোহী এবং জিহাদি গোষ্ঠীগুলোর শেষ ঘাঁটি।

গত কয়েক বছরে সিরিয়ার বিভিন্ন শহর এবং জনপদ থেকে বিতাড়িত হয়ে বিদ্রোহীরা এখানে এসে জড় হয়েছে।

জাতিসংঘের দেওয়া হিসাবে ইদলিবের জনসংখ্যা ২৯ লাখ, যার মধ্যে ১০ লাখই শিশু।

ইদলিব প্রদেশের উত্তরে তুরস্কের সীমান্ত। পশ্চিমে ভূমধ্যসাগরের উপকূলীয় শহর লাটাকিয়া। আলেপ্পো এবং রাজধানী দামেস্কের মধ্যে সংযোগকারী একাধিক মহাসড়ক এই ইদলিব প্রদেশের ভেতর দিয়ে গেছে।

প্রেসিডেন্ট আসাদ যদি ইদলিবের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারেন, তাহলে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের চূড়ান্ত পরাজয় একরকম নিশ্চিত হয়ে যাবে।

সুতরাং আরেকটি মানবিক সঙ্কটের ঝুঁকি বা আমেরিকার হুঁশিয়ারি – কোনোটাই তোয়াক্কা করছে না সিরিয়া এবং রাশিয়া।

প্রেসিডেন্ট পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ইদলিবে জিহাদিরা সিরিয়ায় রুশ ঘাঁটিগুলোর জন্য হুমকি তৈরি করেছে এবং সিরিয়ায় রাজনৈতিক সমাধানের জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, সিরিয়ার সেনাবাহিনী ইদলিবে “সন্ত্রাসীদের আস্তানা” ধ্বংস করার জন্য প্রস্তুত।

ইদলিব কার নিয়ন্ত্রণে?
এই প্রদেশটি একক কারো নিয়ন্ত্রণে নেই। অনেকগুলো বিদ্রোহী গোষ্ঠীর অবস্থান এখানে, যাদের নিজেদের মধ্যেই অনেক বিরোধ রয়েছে।

ধারণা করা হয়, এসব বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর অনুগত যোদ্ধার মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ৩০,০০০।

এদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী গোষ্ঠীর নাম হায়াত তাহরির আল শাম (এইচটিএস)। কট্টর ইসলামপন্থী এই গোষ্ঠীর সাথে আল-কায়দায় সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা

প্রাদেশিক রাজধানী সহ তুরস্কের সাথে গুরুত্বপূর্ণ বাবা আল-হাওয়া সীমান্ত এই গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে।

জাতিসংঘের সন্ত্রাসী তালিকায় রয়েছে এরা। ইদলিবে এদের যোদ্ধার সংখ্যা ১০,০০০ – যাদের মধ্যে অনেক বিদেশী রয়েছে।

ইদলিবে দ্বিতীয় শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নাম ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (এনএলএফ)। এরা তুরস্ক সমর্থিত। এইচটিএসের বিরোধী কয়েকটি ক্ষুদ্র কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠী একজোট হয়ে এ বছরই এনএলএফ শুরু করে। এদের মধ্যেও আহরার আল শামের মত জিহাদি গোষ্ঠী রয়েছে।

কেন সিরিয়া সরকার এখন হামলা করতে চাইছে?
রাশিয়ার বিমান হামলা এবং স্থালে ইরান সমর্থিত হাজার হাজার মিলিশিয়া যোদ্ধাদের সমর্থনে সিরিয়ার সরকার সম্প্রতি বিদ্রোহীদের কোণঠাসা করে ফেলেছে। শক্তি সঞ্চয়ের কোনো সুযোগ সরকার এখন বিদ্রোহীদের দিতে চাইছে না।

৩০ অগাস্ট সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ইদলিবকে মুক্ত করাই এখন সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার। তিনি বলেন, বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ঠেকাতে সরকার মীমাংসার চেষ্টা করছে, কিন্তু তা কাজ না করলে যে কোনো পন্থা নেওয়ার জন্য সরকার প্রস্তুত।

ইদলিবে লড়াই ঠেকানোর জন্য রাশিয়ার সাথে আপোষ মীমাংসার চেষ্টা করছে তুরস্ক। তুরস্কের ভয় – ইদলিবে বড় ধরণের লড়াই শুরু হলে তাদের সীমান্তে নতুন করে শরণার্থীর ঢল নামবে। তুরস্কে এখনই প্রায় ৩০ লাখ সিরিয় শরণার্থী রয়েছে।

ইদলিবের বাসিন্দাদের সম্ভাব্য পরিণতি কী হবে?
ইদলিবে পুরাদস্তুর লড়াই শুরু হলে বেসামরিক লোকজনের ওপর তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।

এমনিতে শহরের লাখ লাখ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের নানা জায়গা থেকে তাড়া খেয়ে হাজার হাজার বিদ্রোহী তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছে। ফলে অনেক জায়গায় জনসংখ্যার চাপ আশঙ্কাজনক বেড়ে গেছে।

জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা সাবধান করেছেন – ইদলিবে বড় কোনো লড়াই বাধলে সিরিয়ায় নজিরবিহীন মানবিক দুর্যোগ দেখা দিতে পারে।

জাতিসংঘ বলছে, ৮০০,০০০ মানুষ বাস্তচ্যুত হতে পারে।

লাখ লাখ শরণার্থী তৈরি হতে পারে এই ভয়ে তুরস্ক সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে।

সিরিয়ার জাতিসংঘের বিশেষ দূত স্টাফান দ্য মিস্তুরা হঠাৎ বড় কোনো অভিযান শুরু না করার জন্য রাশিয়া এবং ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি দুটো সম্ভাব্য সমাধানের প্রস্তাব করেছেন: এক, রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা অব্যাহত রাখা এবং দুই, বেসামরিক লোকজন যাতে নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে পারে, তার ব্যবস্থা করা।

তুরস্ক কোনোভাবেই চাইছে না ইদলিবে বড় কোনো যুদ্ধ শুরু হোক। তুরস্ক, ইরান, সিরিয়া এবং রাশিয়ার নেতারা শুক্রবার ইরানে একটি বৈঠকে বসবেন বলে কথা রয়েছে।

কিন্তু মঙ্গলবার রাশিয়ার বিমান হামলা ইঙ্গিত দিচ্ছে, ইদলিব নিয়ে একবারেই পিছু হটতে ইচ্ছুক নয় সিরিয়া এবং তার মিত্ররা।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আবারো এস আলমে আগুন 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনির গুদামের পর এবার তেলের মিলে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের...

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...