মানুষের আয়ু দেড়শ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে যে চিকিৎসায়

Date:

Share post:

এক কাপ কফির দামেই যদি পাওয়া যায় এমন একটি পিল, প্রতিদিন যেটি খেয়ে ঠেকিয়ে দেয়া যাবে আপনার বার্ধক্য, তাহলে কেমন হয়? এরকম একটি ঔষধ বা অমরত্ব-সুধা আবিস্কারের চেষ্টা ছে বহু শত বছর ধরে। কিন্তু হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের এক সাম্প্রতিক গবেষণা যদি স হয়, তাহলে সেই স্বপ্ন খুব শীঘ্রই বাস্তবে রূপ নিতে পারে।

গবেষকরা দাবি করছেন, এই বার্ধক্য প্রতিরোধী গবেষণা সফল হলে মানুষ দেড়শো বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। শরীরের বুড়িয়ে যাওয়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সেল বা কোষ ব্যবহার করে একেবারে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও তৈরি করা যাবে। আর ২০২০ সালের মধ্যেই হয়তো এই চিকিৎসা মানুষের ওপর প্রয়োগ করা যাবে।

হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের এই যুগান্তকারী গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড: ডেভিড সিনেয়ার। ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে তারা এর মধ্যে সফল হয়েছেন। এখন চেষ্টা চলছে, বার্ধক্য প্রতিরোধী এই চিকিৎসা মানবদেহে প্রয়োগ করা যায় কীনা।

হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল গত মার্চে তাদের সাইটে প্রথম এই গবেষণার কথা করে। গবেষক দলের প্রধান ড: ডেভিড সিনক্লেয়ার সেখানে নিজেই ব্যাখ্যা করেছেন কিভাবে এই বার্ধক্য ঠেকানোর চিকিৎসায় তারা সাফল্য দেখতে পাচ্ছেন।

“আমাদের বয়স যখন বাড়ে, তখন আমাদের শরীরের ভেতর যেসব ছোট ছোট রক্তনালী আছে, সেগুলো বুড়িয়ে যেতে থাকে এবং এ পর্যায়ে একদম শুকিয়ে যায়। ফলে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এবং পেশিকলায় রক্ত প্রবাহ অনেক কমে যায়। মানুষের শরীরের অনেক রোগ-ব্যাধির মূল কারণ কিন্তু এই রক্তনালীর বার্ধক্য”, বলছেন তিনি। বিশেষ করে বহু ধরণের হৃদরোগ, স্নায়বিক রোগ এটা থেকেই হয়।

কিন্তু হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের গবেষক দল ইঁদুরের ওপর গবেষণা চালিয়ে তাদের মধ্যে এই রক্তনালীর বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধ শুধু নয়, সেটিকে ঘুরিয়ে দিতেও সক্ষম হয়েছেন। এই সাফল্যের মানে হচ্ছে, মানুষের অনেক ধরণের রোগ-ব্যাধির নিরাময় এখন য়ের ব্যাপার মাত্র।

এই গবেষণার একেবারে কেন্দ্রে আছে রক্তনালী এবং মাংসপেশির সম্পর্ক। মানুষের রক্তনালীর ভেতরের দেয়ালে আছে এনডোথেলিয়াল সেল বা কোষের আস্তরণ। রক্তনালীকে সজীব রাখতে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই এনডোথেলিয়াল সেলের বয়স যত বাড়তে থাকে, মানুষের শরীরের রক্তনালী শুকিয়ে যেতে থাকে এবং এক পর্যায়ে একদম মরে যায়। ফলে শরীরের অনেক অংশেই রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এর মানে হচ্ছে আমাদের শরীরের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ এবং পেশির কার্যক্ষমতা কমে যায়।

মানুষ যখন নিয়মিত শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করে, তখন এই প্রক্রিয়া কিছুটা থমকে দেয়া যায়। কিন্তু সেটার একটা সীমা আছে। একটা বয়সের পর শরীর চর্চা করেও আর হয় না। রক্তনালীর মৃত্যু ঠেকানো যায় না।

“আমরা এই রক্তনালীর বুড়িয়ে যাওয়ার রহস্য আসলে উদঘাটন করেছি এই গবেষণায়”, বলছেন ড: ডেভিড সিনক্লেয়ার।

এনএডি নামের একটি মলিকিউল এবং সার্ট-ওয়ান নামের একটি প্রোটিন মূলত এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করে। রক্তনালীতে এই এনএডির মূল কাজ হচ্ছে সার্ট-ওয়ান এর উপস্থিতি বাড়ানো। আর সার্ট-ওয়ান রক্তনালী এবং পেশীকলার মধ্যে সংযোগ ঘটায়। কিন্তু বয়স যত বাড়ে, রক্তনালীর মধ্যে এই এনএডি এবং সার্ট-ওয়ান, দুটিই কমতে থাকে। ফলে রক্তনালী এবং মাংসপেশির মধ্যে যোগাযোগও কমতে থাকে।

ড: সিনক্লেয়ার এবং তাঁর সহকর্মীরা ইঁদুরের ওপর যে গবেষণা চালিয়েছেন, সেখানে তারা এনএমএন নামের একটি রাসায়নিক যৌগ প্রয়োগ করেন ইঁদুরের দেহে। এই এনএমএন ইঁদুরের রক্তনালীতে এনএডি’র মাত্রা বাড়ায়। এর পরিণামে সার্ট-ওয়ান নামের প্রোটিনের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। ফলে ইঁদুরের রক্তনালীর এনডোফেলিয়াল সেলগুলো খুবই কর্মক্ষম থাকে। যা পেশিতে রক্তপ্রবাহ বাড়াতে করে।

যেসব বয়স্ক ইঁদুরের ওপর এই গবেষণা চালানো হয়, তাদের ক্ষেত্রে নাটকীয় সাফল্য পেয়েছেন গবেষকরা। তাদের শারীরিক সক্ষমতা ৮০ শতাংশ বেড়ে গেছে।

ড: সিনক্লেয়ার বলছেন, যারা এখন বার্ধক্যের কারণে আর শরীরচর্চা করতে পারেন না, বা চলাফেরা করতে পারেন না, তাদের ্য এই গবেষণা এক বিরাট র্তন নিয়ে আসতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

বিশাল বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল ইতালির রাজধানী, আহত ২৭

ইতালির রাজধানী রোমের পূর্বাঞ্চলীয় একটি পেট্রোল পাম্পে বিশাল বিস্ফোরণ ঘটেছে। শুক্রবার (৪ জুলাই) এই বিস্ফোরণে ১০ পুলিশ কর্মকর্তা...

ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করুন : জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ

ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক ও আর্থিক সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অধিকৃত ফিলিস্তিনি...

ইরানে হামলায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিও জড়িত: রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানি ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলি আক্রমণকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছিল। তাই তাদের...

ইউক্রেনে বড় ধরনের হামলা করল রাশিয়া

ইউক্রেনে বেশ বড় ধরনের ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ২০২২ সালে আগ্রাসন শুরুর পর এটাই ছিল রাশিয়ার সবচেয়ে বড়...