রাতের বাসে মেয়েদের যে পরিস্থিতিতে পড়তে হয়

Date:

Share post:

নিরাপত্তার শংকা নিয়েই রাতে পথ চলতে হয় নারী যাত্রীদের

বাংলাদেশে নারী যাত্রীদের অনেকেই বলছেন, রাতে চলাচলের ক্ষেত্রে পরিবহন সংশ্লিষ্ট লোকজন কিংবা পুরুষ যাত্রীদের দ্বারা শারীরিক কিংবা মানসিক নির্যাতনের শিকার হন তারা।

একদিকে নিরাপত্তা নিয়ে আস্থাহীনতা অন্যদিকে সামাজিক অসচেতনতার কারণে দিনদিন নির্যাতন ও নিগ্রহের ঘটনা বাড়ছে।

নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন, নিরাপত্তার জন্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর দৃশ্যমাণ তৎপরতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নারীদের প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই।

রাত ন’টায় ঢাকার মোহাম্মদপুরে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং বিভাগে কর্মরত রিমা ইসমাত।

মোহাম্মদপুর থেকে তার গন্তব্য বেড়িবাধ পার হয়ে বসিলা। এলাকাটা বেশ নির্জন।

তাই রিমা ইসমাত বাসেও ওঠেন নানা হিসেব নিকেষ করে।নদীতে বোমা পাওয়ার পর বন্ধ লন্ডনের সিটি এয়ারপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা কতটা নিরাপদ?

তিনি বলছিলেন, ”আমি বাসে উঠি। যদি দেখি অনেকে নেমে যাচ্ছে এবং যাত্রী খুব কম তখন আমিও নেমে যাই। কারণ সবসময়ই একটা ভয় কাজ করে।”

মিসেস ইসমাতের আশংকা রাতের যাত্রায় নির্জন রাস্তায় যৌন হেনস্থার শিকার হতে পারেন তিনি।

এমন আশংকার ভিত্তিও আছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গণপরিবহণের নারীদের উপর যৌন নিপীড়ন হবার অনেক ঘটনাই সামনে এসেছে।

মিসেস ইসমাতের নিজেরও আছে তিক্ত অভিজ্ঞতা।

‘একদিনের ঘটনা, আমার ডানপাশে একজন পুরুষ যাত্রী বসা। বামপাশে আরেকজন দাঁড়ানো যাত্রী। ডানপাশে যিনি বসা তাকেও আমি ট্যাকল করতে পারছি না, অন্যদিকে দাঁড়ানো যাত্রীও আমার উপর চলে আসছেন। আমি বললেও শোনে না। অন্য পুরুষ যাত্রীরাও নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।”রাতে নিরাপত্তা বলতে পুলিশের টহল গাড়ি

বাংলাদেশে দূরপাল্লার বাসগুলোতে রাতের বেলায় যেসব নারী যাত্রী ভ্রমণ করেন তাদের জন্য কী নিরাপত্তা আছে?

যতটুকু দেখা যাচ্ছে, এসব পরিবহনে নিরাপত্তা বলতে সড়কে পুলিশের টহল আর বাসে কোম্পানি নিযুক্ত সুপারভাইজার।

রাজধানীর গাবতলীতে যশোরগামী একটি বাসের চালক অবশ্য জানালেন, তাদের বাসে নারী যাত্রীরা যথেষ্ট নিরাপদ।

“আমাদের বাসে যদি একলা মহিলা যাত্রী থাকে। তাহলে আমরা চেষ্টা করি, তার পাশের সিটে একজন মহিলা যাত্রী দেয়ার। না দেয়া গেলে সেক্ষেত্রে আমাদের সুপারভাইজার আছে। আমরা খেয়াল রাখি।”

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে গত বছরের ২৫শে আগস্ট দেশজুড়ে আলোচিত কলেজছাত্রী রুপা হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিলো চলন্ত বাসের ভেতরে বাস চালক ও সহযোগীদের মাধ্যমেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা বলছিলেন, বাসে খোদ পরিবহন সংশ্লিষ্টরাই অনেক সময় ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়ান।

তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, “একদিন নাইট কোচে আমি একাই চাপাইনবাবগঞ্জ যাচ্ছিলাম। পাশের সিট খালিই ছিলো। রাত যখন একটু বাড়লো, তখন বাসের সুপারভাইজার এসে দেখা গেল বারবার আমার সঙ্গে গল্প করার চেষ্টা করছে।”

“একটা পর্যায়ে রাত যখন আরো গভীর হলো তখন সে আমার পাশের সিটটায় এসে বসে পড়লো। আমি যখন তাকে বকা দিলাম এবং আমার নানুর পরিচয় দিলাম তখন সে ভয় পেয়ে চলে যায় এবং বলে আপু রাগ করিয়েন না। কিন্তু এরপরও পুরোটা পত আমি সে রাতে ঘুমাতে পারিনি।”

বেসরকারি সংগঠন একশন এইডের একটি জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের বড় শহরগুলোতে দিনের বেলাতেই যৌন হয়রানি থেকে শুরু করে নানারকম হেনস্থার শিকার হন নারী যাত্রীদের একটা বড় অংশ।

তাদের জরিপে, বাসের পুরুষ যাত্রীদের মাধ্যমে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন ৪২ শতাংশ নারী যাত্রী। এছাড়া পরিবহন সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৫৩ শতাংশ নারী যাত্রী।

এরসঙ্গে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাতে নারীযাত্রীদের হয়রানি, ধর্ষণ এমনকি হত্যার ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে ভীতি বাড়ছে।

ফলে দিনের বেলা নারীদের স্বাভাবিক চলাচল দেখা গেলেও রাতে তা অনেকটাই কমে আসে।

রাজধানীর সদরঘাট থেকে সাভার রুটে চলাচলকারী স্বজন পরিবহনের একটি বাসে কথা হয় দুইজন যাত্রীর সঙ্গে।

এদের মধ্যে একজন নারী যাত্রী বলছিলেন, ” কিছু ছেলেপেলে আছে, নানারকমভাবে তারা হয়রানি করে। মানে মহিলাদের হয়রানি তো করেই।”

আরেকজন পুরুষযাত্রী বলছিলেন, “রাতে মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য সরকারের ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আমাদের পুরুষদেরও মানসিকতা পরিবর্তন দরকার।”

কিন্তু গণরিবহন নারীদের নিরাপত্তাবোধের এই অভাব দূর করার কি কোন উপায় আছে নারী অধিকারকর্মী কাশফিয়া ফিরোজ বলছেন, পুরো নগরীটাকেই নারীবান্ধব হতে হবে

নারী অধিকার কর্মী কাশফিয়া ফিরোজ বলছিলেন, “যে শহরে দিনের বেলা নারীরা নিরাপদ নয়, সে শহরে রাতেও নিরাপদ হবে না। নিরাপদ করতে হলে শহরটাকেই নারী বান্ধব করতে হবে। বাসের যারা হেলপার, ড্ইভার আছেন তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। যেন বিপদে পড়লে নারীরা তাদেরকে রিপোর্ট করতে পারে এবং তারাও নারীদের সহায়তায় এগিয়ে আসে।”

ভারতের দিল্লীতে নির্ভয়া হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণের ঘটনার পর সেখানে নারীরা যে কতটা অনিরাপদ তা আলোচিত হয়েছিলো বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশে রূপার ঘটনাটিও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে এখানেও নির্জন রাস্তায় একাকী নারী সমানভাবে অনিরাপদ। বাংলাদেশে যেখানে সর্বক্ষেত্রে নারীপুরুষ সমান অধিকার সমান অংশগ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়, সেখানে গণপরিবহণে একাকী নারীর নিরাপত্তাবোধের ইস্যুটি নিসন্দেহে বড় একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আবারো এস আলমে আগুন 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনির গুদামের পর এবার তেলের মিলে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের...

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...